শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলা শহরের পৌরসভার উপকণ্ঠে মধ্য নওহাটা মহল্লার বাসিন্দা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকার নাগরিক আব্দুল হালিম ওরফে জীবন (৪৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।
৩১ মার্চ রোববার এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুই নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলো- শেরপুর জেলার সদর উপজেলার জংগলদী গ্রামের মো. ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রউফ (৪৫), ডাকপাড়া গ্রামের মো. আবেদ আলীর ছেলে মোবারক ওরফে মোস্তাক (৩২), পূর্বশেরী মহল্লার মো. ফারুক আহাম্মদের স্ত্রী রুপা বেগম (২৮), কান্দা শেরীচর মহল্লার ফারুক হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
এছাড়াও গ্রেফতারদের মধ্যে শেরপুর জেলার সদর উপজেলার ডাকপাড়া গ্রামের মো. আফিল উদ্দিনের ছেলে মো. রকিব হোসেন ওরফে জিহাদ (২০) ও মো. হযরত আলীর ছেলে মো. কালু মিয়া (২৫) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
১ এপ্রিল সোমবার দুপুর ১২টায় শেরপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগমের সভাপতিত্বে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি আব্দুল হালিম ওরফে জীবন হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকার পার্সপোটধারী দ্বৈত নাগরিক আব্দুল হালিম জীবন। সে দীর্ঘ ২৫ বছর আমেরিকায় বসবাসের পর বিগত দুই বছর ধরে শেরপুর পৌরসভার মধ্য নওহাটা মহল্লায় বসবাস করে আসছিল। তার দাম্পত্য জীবনে ১ম স্ত্রী আমেরিকায় বসবাস করা অবস্থায় পরবর্তীতে শেরপুর পৌরসভার চাঁপাতলী মহল্লায় আতিয়া নামে এক যুবতীকে বিয়ে করেন। এদিকে দ্বিতীয় বিয়ে এবং পিতা-মাতার সাথে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে আব্দুল হালিম ওরফে জীবন তার পিতামাতার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করেন এবং অপরদিকে তার পিতা সাইদুর রহমান ওরফে সুরুজ মাস্টার ছেলে আব্দুল হালিম ওরফে জীবনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা দায়ের করেন। এসব পাল্টাপাল্টি মামলার জের ধরে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে তার আমেরিকান প্রবাসী আর এক ভাই’র বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করতে বললে শাহিন তার ব্যবসায়ীক পার্টনার আব্দুর রউফকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা এবং হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
এরই প্রেক্ষিতে আব্দুর রউফ তার সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ ও মোবারকদের দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করার জন্য নির্দেশ দিলে কালু তার দুইজন পূর্ব পরিচিত মহিলা মনোয়ারা বেগম ও রুপা বেগমকে বিষয়টি জানায়। পরে রুপা বেগম জীবনের সাথে প্রেমের অভিনয় করে ৩০ মার্চ শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কৌশলে জীবনকে ডেকে নিয়ে যায় এবং তাকে একটি ঘরে আটক করে রাতে জীবনের মোবাইল ফোন থেকে তার ২য় স্ত্রী নিকট ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।
পরবর্তীতে আসামীগণ জীবনকে শেরপুর সদর উপজেলার চুনিয়ারচর গ্রামের জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা নিশ্চিত করে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং জীবনের সাথে ধস্তাধস্তিতে আসামি কালু ও জিহাদ আহত হয়। পরে তারা নিরাপদে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদিকে গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই হাসপাতালে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ হেফাজতে চিহিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়াও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রেস ব্রিফিং শেষে ধৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।
ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. খোরশেদ আলম (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমানসহ শেরপুর জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available