দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় ইনকিউবেটরের মাধ্যমে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে সফলতা পেয়েছে লিটন নামের এক যুবক। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পদ্ধতি। আর খামারিদের সব ধরণের সহায়তা করছে স্থানীয় উপজেলা প্রাণিবিভাগ।
১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা হয় লিটন ইসলামের সাথে এবং ঘুরে দেখা হয় তার প্রতিষ্ঠিত ইনকিউবেটরের খামারটিও। উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাশিপুর খুশির বাজার এলাকার সাবেক মেম্বার খলিলুর রহমানের ছেলে লিটন ইসলাম ।
প্রায় এক যুগ থেকে তার বাবা তুষ পদ্ধতিতে হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে আসছিলেন। পরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাবার ব্যবসাতে সহযোগিতা করার জন্য ইনকিউবেটর কিনেন। তিনি বিভিন্ন জাতের হাসের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপন্ন করে । বাড়ির পাশে পুকুর থাকায় বিভিন্ন জাতের হাস পালন করেন। যা প্রতিনিয়ত ডিম দেওয়াতে বাড়তি ডিম কিনতে হয় না লিটনকে। অল্প খরচে লাভ হওয়াতে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন লিটনের পরিবার।
খামারি লিটন জানান, এখানে শুধুমাত্র হাঁস প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও বিক্রি করা হয় না। এখানে দেশি সাদা ও কালো জাতের পাশাপাশি চীনের জিনডিং, বেইজিং, পিংকি, ইংল্যান্ডের খাকি ক্যাম্পবেল ও ভারতের রানারসহ বিভিন্ন দেশের উন্নত জাতের হাঁস পালন ও বাচ্চা প্রজনন করা হয়।
তিনি আরও জানান, বীরগঞ্জের খামারটি হাঁস প্রজনন খামার হিসেবে পরিচিত হয়েছে । প্রতি সপ্তাহে ছয়দিন পর পর ডিম ফুটানো বাচ্চা বুকিংয়ের মাধ্যমে খামারি ও উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়। বাজার মূল্যের চেয়ে খুবই কম মূল্যে দেশি বিদেশি নানা প্রজাতির হাঁসের বাচ্চা ও ডিম বিক্রি হয় বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও উদ্যোক্তারা এ খামারে কিনতে আসেন। এখান থেকে হাঁস, বাচ্চা ও ডিম দেশের অধিকাংশ জেলাতেও সরবরাহ করা হয়। তার সফলতা দেখে জেলার অনেক তরুণ এই হাঁসের খামার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
ইনকিউবেটর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেইজিং হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোঁটানের পদ্ধতিতে ৩০০ বাচ্চা ফোটানোর মত ইনকিউবেটর মেশিন উদ্ভাবন করেন তিনি। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা । ২৮ দিন পর বাচ্চাগুলো খোলস থেকে বেড়িয়ে আসার পর সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেন।
বর্তমানে, লভ্যাংশ বেড়ে যাওয়ায় ছোট ইনকিউবেটর ভেঙ্গে এখন ৬ হাজার ও ১২ হাজার বাচ্চা ফোটানোর ইনকিউবেটর তৈরি করেন। এতে তার খরচ হয় ৫ লক্ষ টাকা । প্রতিটি বাঁচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। বিক্রি করছেন ৭২ থেকে ৭৫ টাকায়। মাসে তার ১৩ হাজার বাচ্চা বের হয়ে আসে। মাসে তার আয় হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা।
খানসামা, দেবীগঞ্জ, নিলফামারী, ভুল্লি বাজার কিশোরগঞ্জ, ডোমার, ডিমলা , দিনাজপুর, লালমনিরহাট থেকে ক্রেতারা এসে লিটনের কাছ থেকে হাঁসের বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি সহযোগিতা পেলে তরুণ এই উদ্যোক্তা প্রসেসিং প্লান্ট তৈরির মাধ্যমে হাঁস মোটাতাজা করে মাংস বাজারজাত করার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন।
বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন, ভেকসিন ওষুধসহ সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এ পর্যন্ত ২ থেকে ৩ লাখ টাকার হাঁস ও ডিম বিক্রি করেছেন। আমরা আশা করছি তার সফলতা দেখে এ উপজেলার অন্যান্য নারী-পুরুষ অনুপ্রোনিত হয়ে খামারি হয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available