হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) আর্কিটেকচার বিভাগে পাঁচ বছরের কোর্স শেষ করতে সময় লাগছে আট বছর। দশ বছরে এই বিভাগ থেকে তিনটা ব্যাচ বের হয়েছে ১৪, ১৫ ও ১৬ ব্যাচ। যেখানে ১৪ ব্যাচের সময় লেগেছে সাড়ে সাত বছর, ১৫ ব্যাচের আট বছর, ১৬ ব্যাচেরও একই সময় লেগেছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অনার্স শেষ হয়ে গেছে সেখানে ১৮ ব্যাচের এখনো ৫ লেভেল ১ সেমিস্টার চলছে।
এই বিভাগের মোট ৮ জন শিক্ষক এদের মধ্যে ৩ জনই শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। ৫ জন শিক্ষক দিয়ে চলছে সাতটি ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। সামনে নতুন আরেকটা ব্যাচের ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। ৫ জন শিক্ষকই শিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন।
শুধু শিক্ষক সমস্যায় না ক্লাসরুম এবং সরঞ্জাম সংকটেও পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যান্য ডিগ্রির থেকে টেবিল চেয়ার ল্যাব রুম সব কিছুই আলাদা। নবনির্মিত দশতলা ভবন নির্মাণের পূর্বে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাশেম স্যার আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন দশ তলা বিল্ডিং হবে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত স্পেস দেওয়া হবে এবং সকল সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে। বর্তমানে অ্যাকাডেমিক ভবন দুইয়ে রুম বরাদ্দ করা হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিলিটিজ নাই। ওয়াজেদ ভবনে আমাদের যে দুইটা রুম ছিল সেগুলোও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সবসময় অবহেলিত ডিপার্টমেন্ট যেন আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান এর সময়কালে আমরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে গেলে আমাদের তাচ্ছিল্য করেছে। সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ এরকমও আমাদের বলেছে যে বেশি কথা বললে ডিপার্টমেন্টই বন্ধ করে দিবো।’
আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, ‘বর্তমানে যেসব শিক্ষক রয়েছেন তারা তাদের সর্বোচ্চ টুকু দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো যেখানে শিক্ষক সংখ্যা কম সেখানে শিক্ষা ছুটি কেন দিতে হবে? আমাদের কী সময়ের দাম নাই?’
এ বিষয়ে আর্কিটেকচার বিভাগের চেয়ারম্যান এস. এম. নাঈম হোসেন মিথুন বলেন, ‘স্থাপত্য বিভাগের ডিগ্রি পাঁচ বছরের এবং ১৯৬ ক্রেডিট। আমাদের বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও বর্তমানে ৩ জন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। আমাদের বর্তমানে ৭টি ব্যাচ চলমান রয়েছে। ক্লাস ও ডিজাইন স্টুডিও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রায় ৩৮ জন শিক্ষক প্রয়োজন। একটা ব্যাচের ডিজিটাল স্টুডিওর জন্য দুইজন শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের রয়েছে মাত্র ৫ জন শিক্ষক। তাছাড়া আমাদের ক্লাসরুম ও ডিজাইন স্টুডিও টিএসসি, ওয়াজেদ ভবন এবং অ্যাকাডেমিক ভবন ২ এ বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে। এজন্য শিক্ষকরা চাইলেও দুইটা ব্যাচের ডিজাইন স্টুডিও সমান্তরালভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। যদি আমরা একটা ভবনে থাকতে পারতাম তবে সেশনজট অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে বারবার অ্যাকাডেমিক ভবন ২ সংস্কার এর জন্য বলেছি। বিগত প্রশাসনের সময় আমরা শুধুমাত্র ডিজাইন স্টুডিও করার জন্য দুইটা রুমের ভেতরের দেয়াল ভেঙে রুমগুলো বড় করার আবেদন করা হয়। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান অনুমোদন দিলেও প্রশাসনিক জটিলতায় সেটিও থমকে আছে। এছাড়া শিক্ষক নিয়োগে প্রশাসনের ধীর গতি তো রয়েছেই।’
ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মফিজউল ইসলাম বলেন, ‘স্থাপত্য বিভাগের সেশনজটের পেছনে শিক্ষক সংকট মুখ্য কারণ। প্রশাসনের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ধীর গতির কারণে বিগত দুইটা বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক যোগদান করেননি। তবে আমরা গেস্ট টিচার এর মাধ্যমে তত্ত্বীয় বিষয়গুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। ক্লাসরুম ও ডিজিটাল স্টুডিও সংকট দ্রুত সময়ে কেটে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ভবন ২ এর কিছু সংস্কার কাজ হয়ে গেলে এই সংকট কেটে যাবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available