• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:০৫:২০ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ রাত ১২:০৫:২০ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

২৫ বছর ধরে পরিবারকে খুঁজছেন রংপুরের জোবায়দুল

১৮ অক্টোবর ২০২৩ দুপুর ১২:০৬:০৪

২৫ বছর ধরে পরিবারকে খুঁজছেন রংপুরের জোবায়দুল

রংপুর ব্যুরো: জোবায়দুল ইসলাম। বয়স ত্রিশ পেরিয়েছে। পেশায় তিনি রিকশাচালক। ২৫ বছর ধরে রাজধানী ঢাকার বুকে বসবাস। ঢাকা শহরের অলিগলি কমবেশি সবই তার চেনা। রিকশায় যাত্রী নিয়ে ছুটতে গিয়ে প্রায়ই আঁতকে উঠেন তিনি। নিজ এলাকার পরিচিত ভাষায় কাউকে কথা বলতে শুনলেই থমকে যান, জানতে চান কোথায় বাড়ি? কিন্তু জোবায়দুল নিজেই জানেন না তার আপন ঠিকানা।

যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন কোনো এক অচেনা মানুষের হাত ধরে অজানা শহর ঢাকায় আসেন জোবায়দুল। সেই থেকে আপন ঠিকানা বলতে না পারা জোবায়দুল তার মা-বাবাকে খুঁজছেন। বাবা, ভাই-বোনদের নাম বলতে পারলেও মনে নেই নিজ গ্রামের নাম-ঠিকানা। তবুও তিনি যেতে চান জন্ম ঠিকানায়। কিন্তু কীভাবে যাবেন, কিছুই যে তার মনে নেই। তবে তার দাবি তিনি ‘রংপুরের মানুষ’।

বর্তমানে ঢাকার জিনজিরা কালীগঞ্জ এলাকার নদীঘেঁষা সদরঘাটে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন জোবায়দুল। তার স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন রিকশা নিয়ে ছুটে বেড়ালেও তার মন খোঁজে আপন ঠিকানা। সম্প্রতি ঢাকার আদালতপাড়ায় তার সঙ্গে কথা হয়।

জোবায়দুলের ভাষ্যনুযায়ী, পাঁচ-ছয় বছর বয়সে গ্রামের পাশের এক স্টেশন থেকে অচেনা এক ছেলের সাথে ট্রেনে উঠে পড়েছিল। ইচ্ছে ছিল ঢাকা দেখার। কিন্তু আপন ঠিকানা ভুলে গিয়ে সেই ঢাকাতেই যে তাকে এভাবে থাকতে হবে, তা জানা ছিল না। ট্রেনে যার হাত ধরে উঠেছিল সেই ছেলে কখন নেমে যায় তাও জানতেন না জোবায়দুল। তখন চলন্ত ট্রেনে ঘুমন্ত যাত্রায় ফুরিয়ে যায় দীর্ঘ রেলপথ। ট্রেন পৌঁছে যায় ঢাকায়।

এই প্রতিবেদককে জোবায়দুল ইসলাম বলেন, আমি হঠাৎ বুঝতে পারি, ট্রেন থেমে আছে। তখন ধোয়ামোছার কাজ চলছিল। একজন এসে আমাকে ট্রেন থেকে নেমে যেতে বললে আমি নেমে পড়ি। এটি ছিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। ট্রেনে চড়ে ঢাকা এলাম, কিন্তু যার সাথে এসেছি তাকে আর পেলাম না। অচেনা শহরে আমি কোথায় যাব, কী করব, কিছুই জানা ছিল না। ভাগ্যক্রমে ফুটপাতই আমার ঠিকানা হলো। আমি হয়ে গেলাম পথশিশু (টোকাই)।

নিজ গ্রামের নাম জানেন না জোবায়দুল। যে স্টেশন থেকে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় এসেছেন, সেটাও তার মনে নেই। বইখাতা হাতে স্কুলে পা ফেলার আগেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাচক্রে শিক্ষার আলোবঞ্চিত হতে হয় তাকে। ঢাকার ফুটপাতে আর অলিগলিতে পথশিশুদের সাথে কাগজ কুড়িয়ে বেড়ে ওঠা তার। কোনো রকমে কলা-রুটি খেয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে জীবন থেকে কেটে যায় একেকটি বছর।  

জোবায়দুল আরও বলেন, সবসময় রংপুর যেতে মন চাইছিলো। কিন্তু রংপুরের কোথায় যাবো, কোন গ্রামে গিয়ে পরিবারকে খুঁজবো, এটাতো আমি জানি না। যখন আমার দশ-বারো বছর, তখন আমি ট্রেনে করে রংপুরের পথে রওনা দেই। কিন্তু রংপুর আগে না পরে সেটা মনে করতে না পারায় আমি গাইবান্ধা থেকে ফিরে আসি। পরে আর রংপুর যাওয়া হয়নি। কিন্তু রংপুরের মানুষের ভাষা (আঞ্চলিক কথাবার্তা) শুনলে আমার মনে হয় আমার বাড়িও সেখানে। শুধুমাত্র গ্রাম, ইউনিয়ন বা উপজেলার নাম মনে না থাকায় আমি এখনো হারানো পরিচয় নিয়েই বেঁচে আছি।

শিশুকালে হারিয়ে যাওয়া জোবায়দুলের দাবি তার বাবা মস্তুল্লা বেঁচে নেই। বড় ভাইদের কাছে শুনেছেন, তিনি যখন মায়ের গর্ভে তখনই তার বাবা মারা যান। জোবায়দুলের মনে নেই, মায়ের নামটিও। তবে তার ছয় ভাইবোনের নাম মনে আছে। বড়বোন দুলালীর বিয়ে হয়েছে দিনাজপুর জেলায়। দুই বোন আর চার ভাইয়ের মধ্যে জোবায়দুল সবার ছোট। বড় দুইবোনের মধ্যে একজন দুলালী, আরেকজন মল্লিকা। ভাইয়েরা হলেন হাসান, শহিদুল এবং রহিদুল।

পরিবারের অন্য সদস্যদের কারো পরিচয়, ঠিকানা স্মরণ করতে না পারা জোবায়দুল বলেন, আমরা মায়ের নাম মনে নেই। বাবাকে তো আমি দেখিনি। জন্মের পর শুনেছি, আমি মায়ের পেটে থাকতেই নাকি বাবা মারা যান। দাদা-দাদি, নানা-নানিসহ আত্মীয়-স্বজন তেমন কারো কথা আমার মনে নেই। আমি তো তখন একেবারেই ছোট ছিলাম। তবে আমার বড়ভাই শহিদুলকে দেখলে আমি চিনতে পারব। কারণ, তার চোখে একটি জন্মগত চিহ্ন রয়েছে। আমার ওই ভাই এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে রাখালের কাজ করত। ওই চেয়ারম্যানের নাম আমার জানা নেই।

ঢাকার আরামবাগে পথশিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের (অপরাজিত/অপরাজেয় বাংলাদেশ) বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন জোবায়দুল। সেখানে পাঁচটি বছর কেটেছে তার। বর্তমানে ওই সংগঠনটি সেখানে নেই বলে জানান তিনি। তেজগাঁও এলাকায় থাকাকালীন সেখানেও এমন একটি সংগঠন থেকেও তাকে সহযোগিতা করা হয়েছিল। ওই দুটি সংগঠনে তার শৈশবের ছবি থাকতে পারে বলে জানান তিনি।

জোবায়দুল বলেন, আমার মা বেঁচে আছে কিনা জানি না। কিন্তু আমার ভাইবোনেরা তো বেঁচে থাকার কথা। তারা আমাকে দেখে চিনতে না পারলেও আমি কিছু স্মৃতি এবং বড়ভাইয়ের জন্মচিহ্ন দেখে চিনতে পারব মনে হয়। রংপুরের মানুষের ভাষা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু আমি রংপুরের ভাষায় কথা বলে পারি না। ছোট থেকে ঢাকায় আছি, একারণে নিজ গ্রামের ভাষা তো শেখা হয়নি। তবে রংপুরের মানুষের ভাষা শুনলেই আমার মনে হয় আমিও রংপুরের, রংপুরেই আমার বাড়ি।

তিনি আরও বলেন, বহু মানুষকে আমার জীবনের এই করুণ পরিণতির কথা বলেছি। কিন্তু কেউ কোনো সহযোগিতা করেনি। আমি ২৫ বছর ধরে এই ঢাকা শহরে পড়ে আছি। আমার মনটা কিন্তু এখানে নেই। রংপুর শব্দটা শুনলেই মনে হয় আমি আমার গ্রামের ঠিকানা পেয়ে যাবো। আমার পরিবারকে খুঁজে পাবো। আল্লাহ্ আমাকে আমার আপন ঠিকানায় পৌঁছে দিবেন, এই আশায় বুকে পাথর চেপে আছি।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩