কক্সবাজার প্রতিনিধি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় সংসদের হুইপ ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, নাম/ঠিকানা বিভ্রাটের কারণে এখনো শত-শত বাংলাদেশি মানুষ মিয়ানমারে জেলে বন্দি রয়েছে। তাদের শনাক্ত করা খুবই জটিল হয়ে গেছে। তারপরেও তাদের আনার প্রচেষ্টা চলছে।
২৪ এপ্রিল বুধবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটে মিয়ানমারের কারাগার থেকে ১৭৩ বাংলাদেশি ফেরত আনার প্রাক্কালে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সাইমুম সরওয়ার কমল জানান, যারা মিয়ানমারের কারাগারে ভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষ করে সরকারের প্রচেষ্টায় ফিরছেন এবং তাদের স্বজনদের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। যারা আজ ফেরত এসেছে, স্বজনরা তাদের পেয়ে অনেক ব্যাকুল হয়েছিলো। তারা মনে করেছিল, তাদের সন্তানরা বেঁচে নেই। আজকে আমার প্রস্তাবে প্রত্যাবর্তনের কাজটি অনেক এগিয়ে গেছে। যেটা আমি তথা সরকারের প্রচেষ্টায় আজকে ১৭৩ জন ফেরত আনা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আজ তাদেরকে পেয়ে স্বজনরা খুবই আবেগে আপ্লুত।
তিনি বলেন, শনাক্ত করা আরও ৪০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক মিয়ানমারে রয়েছে, আর শনাক্ত না করা শত-শত লোক মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, আন্দামান, মালয়েশিয়া কাশ্মীরসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশগুলোতে রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে পালিয়ে এসে অবস্থানরত মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যদেরকেও আগামীকাল বৃহস্পতিবার হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে মিয়ানমারের কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ শেষে ১৭৩ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছে। এর আগে গভীর সাগরে অবস্থানরত মিয়ানমার প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘নেভাল শিপ চিন ডুইন’ জাহাজ থেকে এসব বাংলাদেশীদের নিয়ে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর একটি জাহাজ বুধবার দুপুর ১ টা ২০ মিনিটের দিকে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়।
এর আগে বুধবার বেলা ১১ টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার পৌঁছার পর পরই ঘাট থেকে গাড়িযোগে রওয়ানা হয়েছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। যেখানে বিজিবির অধীনে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে বৃহস্পতিবার ফেরত নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে প্রতিনিধি দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছেন, ১৭৩ জনের মধ্যে ১২৯ জন কক্সবাজার জেলার, ৩০ জন বান্দরবান জেলার, সাতজন রাঙ্গামাটি জেলার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, নরসিংদী ও নীলফামারী জেলার একজন করে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ফেরত আসাদের বিজিবি গ্রহণ করে পুলিশকে হস্তান্তর করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে স্ব স্ব থানার পুলিশের মাধ্যমে স্বজনদের হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে।
ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া মিয়ানমারের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ সফররত ‘মিয়ানমার নেভাল শিপ চিন ডুইন’ ১৭৩ বাংলাদেশিদের বহন করে মঙ্গলবারই যাত্রা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন কারাগারে পূর্ণ মেয়াদে সাজা ভোগ করেছেন। অপর ২৯ জন মিশনের প্রচেষ্টায় ক্ষমা করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
মুলত এসব বাংলাদেশীদের নিয়ে আসা মিয়ানমারের জাহাজটি বৃহস্পতিবার সকালেই বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয়রত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ২৮৫ সদস্যকে নিয়ে ফেরত যাবেন।
মিয়ানমারের ২৮৫ সদস্যকে ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়ার জন্যই মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি নাইক্ষ্যংছড়ি গেছেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। প্রথম দফায় ফেরতের সময় ঘটনাস্থলে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ এবং সংশ্লিষ্টরা কথা বলা; এবার তা হচ্ছে না। ফেরত আসা বাংলাদেশিদের গ্রহণ এবং ২৮৫ জনকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানা গেছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available