লালমনিরহাট প্রতিনিধি: কলেজ শিক্ষার্থী আনিছুর রহমানের (১৮) চোখ উপড়ে ফেলা কৃষকদল নেতা আলমগীর হোসেন (৩৪) গ্রেফতার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন। ঘটনাটি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউড়া ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের। কৃষকদল নেতা আলমগীরের লোকজন মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে চোখ হারানো কলেজ শিক্ষার্থীর পরিবারকে। এ ঘটনায় খানায় জিডিও করেছে পরিবারটি।
চোখ হারানো কলেজ শিক্ষার্থী আনিছুর রহমান বাউড়া ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের মফিজুল ইসলামের ছেলে। তিনি বাউড়া পুণম চাঁদ ভূতুরিয়া কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত কৃষকদল নেতা আলমগীর হোসেন একই গ্রামের সাদেক হোসেনের ছেলে। তিনি বাউড়া ইউনিয়ন কৃষকদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
পুলিশ জানায়, গত বছর ১১ নভেম্বর দুপুরে আলমগীর তার লোকজন নিয়ে মফিজুল ইসলামের ৯ শতক জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। দখলে বাঁধা দেওয়ায় মফিজুল ও তার স্ত্রী আনজু আরা বেগমকে রক্তাক্ত জখম করে জমি দখলকারীরা। খবর পেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী আনিছুর তার বাবা-মাকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এ সময় আনিছুরকে আটক করে মারধর করার পর ধারাল ছুরি দিয়ে তার ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ১০ জনের নামে পাটগ্রাম থানায় একটি মামলা করা হয়।
চোখ হারানো কলেজ শিক্ষার্থী আনিছুর রহমান বলেন, আমাকে এখন সবসময় চোখে সানগ্লাস পড়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। আমি ডান চোখ চিরতরে হারিয়েছি। আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েছি। লেখাপড়া শিখে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। চোখ হারানোর পর সে স্বপ্ন অনেকটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমি খুব কষ্টে বেঁচে আছি।
আনিছুরের বাবা মফিজুল ইসলাম বলেন, গেল চার মাস বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের হাসপাতালে ছেলের চোখের চিকিৎসা করেছি। অনেক টাকা ব্যয় করেছি কিন্তু তার চোখ ফিরিয়ে আনতে পারিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আনিছুরের ডান চোখ চিরতরে জন্য নষ্ট হয়েছে। মাত্র ৯ শতক জমি জোরপূর্ব দখল করতে এসে তারা আমার ছেলের চোখ উপড়ে ফেলেছে। এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত কৃষকদল নেতা আলমগীর এখনো গ্রেফতার হয়নি। তার পক্ষের লোকজন মামলা তুলে নিতে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। গত ১১ মার্চ থানায় জিডি করেছি। আসামি ও তাদের লোকজন প্রভাবশালী। তারা যেকোন সময় আমাদের ক্ষতি করতে পারে।
আনিছুরের মা আনজু আরা বেগম বলেন, আমাদের ছেলে চোখ হারিয়েছে। এটা সহ্য করতে পারছি না। আনিছুর সবসময় কাঁদে। এতে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়। সন্তানের এক চোখ নেই। এটা ভেবে কোনদিনই রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পাটগ্রাম থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) রমজান আলী বলেন, মামলার ১০ জন আসামির মধ্যে ৮ জন জামিনে রয়েছে। কৃষকদল নেতা আলমগীরসহ দুইজন এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। কলেজ শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। হুমকি দেওয়ার জিডি তদন্ত করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available