ইটনা (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাহিদামতো ঘুষের টাকা নিয়েও কাজ না করে উলটো ধমক হুমকির অভিযোগ উঠেছে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার এলংজুরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক শাহানুর ইসলামের বিরুদ্ধে। চাহিদামতো ঘুষের টাকা হাতে নিয়ে বছরের পর বছর সেবাগ্রহীতাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কাজ না করে টাকা ফেরত চাইলে উলটো ধমক হুমকি দিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন শাহানুর ইসলাম।
ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অজুহাত ও হয়রানির হুমকি দিয়ে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ বেশ পুরোনো। সাধারণ মানুষ সরকার নির্ধারিত ফ্রি এর প্রায় দশগুণ টাকা ঘুষ দিয়েও সেবা না পেয়ে হতাশ।
জানা যায়, জমি খারিজ বা নামজারি করতে সরকার নির্ধারিত খরচ ১ হাজার ১৭০ টাকা হলেও অফিস সহায়ক শাহানুর দলিলভেদে নেন ১০ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ নামজারির আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১ হাজার টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ বাবদ ১০০ টাকার বাইরে আর কোনো খরচ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা গ্ৰামের মো. ইকবাল মিয়ার নিজস্ব জমি খারিজের উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গেলে অফিস সহায়ক শাহানুর ইসলাম চুক্তি করে জমি খারিজ করে দিবেন টাকা লাগবে ১০ হাজার টাকা অতঃপর ঘণ্টাখানেক দফারফা করার পর নগদ ৯ হাজার ৫০০ টাকা গ্ৰহণ করে জমি খারিজের দায়িত্ব নেন শাহানুর। মাস অতঃপর বছর সময় পেরিয়ে গেলেও খারিজ অথবা টাকা কিছুই পাননি মো. ইকবাল মিয়া। একাধিকবার শাহানুরের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি উলটো ধমক হুমকি খেতে হয়েছে।
মৃগা ইউনিয়ন ভাটিরাজিবপুর গ্ৰামের কৃষক মো. কামাল মিয়াও নিজস্ব জমি খারিজের জন্যে ভূমি অফিসে গেলে অফিস সহায়ক শাহানুর ১৭ হাজার টাকায় চুক্তি করে। চাহিদামতো ঘুষের টাকা দিয়েও বছর পেরিয়ে গেলে জমি খারিজ হয়নি, অতঃপর দীর্ঘদিন অফিস সহায়ক শাহানুরের পেছনে পেছনে ঘুরে ১০ হাজার টাকা ফেরত নিলেও বাকি ৭ হাজার টাকা ফেরত দেইনি।
আর একজন সেবাগ্রহীতা মৃগা ইউনিয়নের মো. সামছুল হক জমি খারিজের জন্য অফিস সহায়ক শাহানুরকে এক বছর পূর্বে ১০ হাজার টাকা দিলেও খারিজ বা টাকা কোনোকিছুই ফেরত দেননি উলটো ধমক হুমকি দিয়ে মুখের উপর ফোন কেটে দিয়েছেন।
মৃগা ইউনিয়নের ভাটিরাজিবপুর গ্ৰামের কৃষক রতন মিয়া অফিস সহায়ক শাহানুর এর কাছে ৭ হাজার টাকা দিয়েছে জমি খারিজের জন্য কিন্তু কাজ না করে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও কোনো কিছু পাননি।
মৃগা ইউনিয়নের লাইমপাশা ভুঁইয়া বাড়ির মেজবাহ উদ্দিন ভুঁইয়া জানান, এক বছর পূর্বে জমি খারিজের জন্য অফিস সহায়ক শাহানুরকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বছর পেরিয়ে গেলেও খারিজ তো হয়নি কাগজপত্রও ফেরত পাননি তিনি। সকাল বিকাল ফোন দিয়েও শাহিনুরের সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয় না।
ভূমি অফিসের সেবা সেবাগ্রহীতাদের এমন শতাধিক অভিযোগ অফিস সহায়ক শাহানুরের বিরুদ্ধে। একাধিক লোকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জানান, শাহানুর মৃগা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বে আসার পর জমি খারিজ এবং জমি ভূমিহীন এনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং কিছু টাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ফেরত দিয়েছে। যারা অসহায় সাধারণ মানুষ তারা টাকা ফেরত পাইনি উলটো ধমক হুমকি খেয়ে টাকার আশা ছেড়ে দিয়েছে।
ইটনা উপজেলার মৃগা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বে থাকাকালীন সাধারণ মানুষকে জমি খারিজ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি অফিস সহায়ক শাহানুর ইসলাম। তিনি এখন এলংজুরী ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দায়িত্বে আছে। উল্লেখ্য যে, এলংজুরী ইউনিয়নের একাধিক লোকজন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে তার দুর্নীতির কথা জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে অফিস সহায়ক শাহানুরের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে আত্মীয়-স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় দেখিয়ে ভয় দেখান এবং টাকা ফেরত দিবেন না যত ইচ্ছে নিউজ করতে বলেন। এছাড়াও অফিস সহায়ক শাহানুরের বিরুদ্ধে নিউজ করে কিছু করতে পারবে না এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, তিনি জরুরি মিটিং এ আছেন, অফিস সহায়ক শাহানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টা খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available