নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডিমলায় গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শরিফ ইবনে ফয়সাল মুনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং চারিত্রিক অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে তারা এক লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন স্থানীয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করতেন। যারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করতেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি এবং কারাবাসে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যান নিজে জমি-দোকানপাট দখল করেছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের জমি অবৈধভাবে লিজ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি স্থানীয় তরুণদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি মাদক ব্যবসার চক্র, যা নীলফামারী ও পার্শ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাটে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোট কারচুপি করেছেন। তিনি ক্ষমতাসীন দলের অবৈধ সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার ও তার শ্বশুর মোতাহার হোসেনকে খুশি রেখে অপরাধের রাজত্ব কায়েম করেছেন। স্থানীয়দের মতে, তিনি সম্প্রতি হাটবাজার উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। কিন্তু ওই অর্থ দিয়ে বাজারে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়নি, ফলে স্থানীয়রা বৈষম্যের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, যার ফলে ওই দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এমন চারিত্রিক অসঙ্গতি এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির কাছ থেকে নাগরিক সেবা গ্রহণ করতে তারা অনীহা প্রকাশ করছেন।
অভিযোগকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে আমার পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছে। তার পরকীয়ার কারণে আমার স্ত্রী ও সন্তান আমার থেকে দূরে রয়েছেন। আমি তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে চাইলেও, স্থানীয় পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়, কারণ তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ দোসর। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতি হাট-বাজারের ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে তিনি পুরো অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, অথচ সেই অর্থ দিয়ে কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুরু হয়নি।
গোলাম সারোয়ার খান নামে আরেক অভিযোগকারী বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বহু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি চক্র গড়ে তোলেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ কেউ করতে গেলে নানাভাবে হয়রানি করতো সে। তার আত্নীয় মন্ত্রী সেই দাপটে সব লুটেপুটে খেয়েছে। কেউ কোনো কথা বলতে পারে নাই। তার বাবার মতোই চরিত্র তার। মানুষের সংসার নষ্টের মতো কাজ করেছে সে। এরকম চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর কেউই চায় না৷ আমরা চাই দ্রুত তাকে অপসারণ করা হোক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত গয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন বলেন, এলাকায় আমার বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেন। আমি কেমন আর যারা অভিযোগ দিয়েছে তারা কেমন মানুষ। অভিযোগ দিতেই পারে গ্রামের রাজনীতি বুঝেন না। পক্ষে বিপক্ষে লোক থাকবেই। যেহেতু তাদের বিপক্ষে নির্বাচন করেছি।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া অভিযোগের প্রাপ্তি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available