নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: ক্যাম্পাসে অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত নীল দলের সাবেক সভাপতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান রিমনকে নিয়ে ট্যুর আয়োজনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে তাকে পুনর্বাসন করার অভিযোগ উঠেছে। একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের ফিশারিজ জুলজি কোর্সের আওতায় চার দিনব্যাপী একটি ফিল্ড ট্যুরের আয়োজন করা হয়। কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ১২ জানুয়ারি ক্যাম্পাস থেকে রওনা দেয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাদের সাথে শিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোর্সের দুইজন শিক্ষকের মধ্যে একজন ড. নাহিদ সুলতানা এবং কোর্সের সাথে সম্পৃক্ত নয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিকভাবে নিষিদ্ধ হওয়া নীল দলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামান।
রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য মতে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে ড. আনিসুজ্জামান রিমনকে সকল প্রকার অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন পর্যন্ত তাকে কোন অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনুমতি প্রদানের বিষয়ে লিখিত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান নোবিপ্রবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. তামজিদ হোসাইন চৌধুরি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফিশারিজ জুওলজি (ফিমস-১১০৪) কোর্সটি সহযোগী অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিদ সুলতানা দুইজন শিক্ষক যৌথভাবে পড়াচ্ছেন। ফিল্ড ট্যুর আয়োজনের বিষয়ে ড. মফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের এক বা দুই দিনের ফিল্ড ট্যুর করার পরামর্শ দেন। তবে অন্য শিক্ষক ড. নাহিদ সুলতানা চার বা পাঁচ দিনের জন্য আয়োজন করার তাগিদ দেন। পরবর্তীতে চার দিনের ট্যুর হওয়ায় ড. মফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের সাথে ট্যুরে অংশগ্রহণ না করায় নীল দলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আনিসুজ্জামানকে সম্পৃক্ত করা হয়।
বিভাগের চেয়ারম্যান সূত্রে জানা যায়, ৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দেয়। যেখানে তারা উল্লেখ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা ট্যুরে অংশগ্রহণ করছে। যেখানে তাদের কোর্সের শিক্ষক ড. মফিজুর রহমান অংশগ্রহণ না করায় তারা ড. নাহিদ সুলতানার সাথে শিক্ষার্থীদের অনুরোধে ড. আনিসুজ্জামান রিমন তাদের সাথে যেতে সম্মত হয়।
পরবর্তীতে একই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১২ জানুয়ারি বিভাগীয় চেয়ারম্যান বরাবর আরেকটি দরখাস্ত জমা দেয়। যেখানে ৩২ জন শিক্ষার্থী সাক্ষর প্রদান করে। সেখানে তারা উল্লেখ করেন নাহিদ সুলতানা ম্যাম আমাদেরকে কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি এবং সাজেক যাওয়ার প্রস্তাব দেন এবং শর্ত দেন যদি ট্যুরে না যাই তাহলে আমাদের FIMS4104 কোর্সে জিরো দেওয়া হবে। এমন ভয়ে আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও আমরা ট্যুরে যেতে সম্মত হই। অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করে লিখেন, পরবর্তীতে ম্যাম আমাদেরকে অনলাইনে সম্মতিসূচক একটি আবেদনপত্র লিখে পাঠান যা আমরা বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মফিজুর রহমান বলেন, কোর্সের ফিল্ড ট্যুর সাধারণত এক বা দুই দিনের হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ করলে আমি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছি ফিল্ড ট্রিপের জন্য এত দূরের জায়গা নির্বাচন করা ঠিক হবে না। পরবর্তীতে শুনতে পাই তারা ট্যুরের জন্য কক্সবাজার এবং সাজেক যাওয়ার সব কিছু ঠিক করে ফেলেছে এবং আমার পরবর্তীতে বিভাগের অন্য একজনকে সাথে নিয়ে ট্যুরে যাবে।
এ বিষয়ে ড. মফিজ আরও বলেন, ড. আনিসুজ্জামান রিমন স্যারকে ট্যুরে নেওয়ার বিষয়ে ড. নাহিদ সুলতানা অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা আমাকে জানিয়েছে। তারা বলেছে তারা আনিসুজ্জামান রিমন স্যারকে চিনে না। ম্যাম তাদেরকে দিয়ে রিমন স্যারকে ট্যুরে নেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনপত্র দিয়েছে।
নীল দলের সাবেক সভাপতি এবং ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অধ্যাপককে ক্যাম্পাসে পুনর্বাসনের অভিযোগের বিষয়ে ড. নাহিদ সুলতানা বলেন, ট্যুরের জন্য প্রশাসনের সম্মতিপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাইনের মাধ্যমে পাস হয়েছে। তাছাড়া রিমন স্যার থিসিসের কাজে ডিপার্টমেন্টে ছিল। এখন এ ট্যুরওতো একাডেমিকের একটি অংশ। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে চেয়ারম্যান বরাবর রিমন স্যারকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
ফিশারিজ এন্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহেদি মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের থেকে আবেদনপত্রগুলো পেয়েছি। শিক্ষার্থীরা প্রথমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফিল্ড ট্যুরে যাচ্ছে এমন একটি দরখাস্ত দেয়। পরবর্তীতে যাওয়ার দিন আমাকে আরেকটি দরখাস্ত দেয় যেখানে তারা বলে তাদেরকে জোরপূর্বক ট্যুরে নেওয়া হচ্ছে। ট্যুর বন্ধ করার বিষয়ে বললে তারা বলে ট্যুরের জন্য তাদের সকল অ্যাডভান্স দেওয়া হয়েছে। তাই আমিও আর না করি নাই। তবে এ বিষয়ে আমরা অ্যাকাডেমিকভাবে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিবো।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান রিমনের অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজের স্থগিতাদেশ এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। তাই তাকে আইনত কোনো অ্যাকাডেমিক কাজে রাখে যাবে না৷ এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available