কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। শীত মৌসুমের শুরুতে আলুর উৎপাদন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালেও সম্প্রতি আলুর বাজার অস্বাভাবিকভাবে অস্থির হয়ে উঠেছে। কৃষকরা মাঠ থেকে মাত্র ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করলেও বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৬০-৬৫ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা কৃষি অফিসার অরুণ চন্দ্র রায় জানান, এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত হিমাগার মালিক, মজুতদার এবং আড়তদারদের সিন্ডিকেটের ভূমিকা রয়েছে।
ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে কৃষকরা মাঠ থেকে আলু উত্তোলন করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন, যা পরে হিমাগারে মজুত করা হয়। এরপর জুন মাস থেকে এই মজুতদাররা বাজারে আলুর সরবরাহ সীমিত করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এই সংকটের সুযোগ নিয়ে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম বাড়ানো হয়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।
কালাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারে দেখা যায়, কার্ডিনাল, গ্র্যানুলা, ডায়মন্ড জাতের আলু ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে এবং দেশি পাকড়ি লাল জাতের আলুর দাম ৭০-৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
কালাই উপজেলার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মৌসুমের শুরুতেই ১৪-১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করেছেন, বর্তমানে সেই আলুই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদন খরচসহ সর্বোচ্চ ২০ টাকা হওয়া উচিত হলেও এখন খুচরা বাজারে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভ থেকে বঞ্চিত হলেও এই লাভের পুরোটা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে।
জয়পুরহাটের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসানও মনে করেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজারকে অস্থিতিশীল করা একটি অন্যায় কাজ। তিনি সঠিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই সংকট সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন।
জয়পুরহাট কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩৮,৯৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছিল এবং উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ১৩ টন। ১৯টি হিমাগারে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ জানান, হিমাগারে এখনো গড়ে ২৩-২৫ শতাংশ আলু সংরক্ষিত রয়েছে, যার মধ্যে কিছু বীজ আলুও রয়েছে। বর্তমানে এই মজুত মূলত ব্যবসায়ীদের অধীনে।
বাজারের অস্থিরতা কমাতে হিমাগারগুলোতে অভিযান চালানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন খুচরা ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। কালাই উপজেলার ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন বলেন, “অসাধু ব্যবসায়ীরা ঘণ্টায় ঘণ্টায় দাম বাড়াচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
কৃষক মোক্তাদির রহমান মনে করেন, ‘সরকার যদি কৃষকদের নিজস্ব মজুত সুবিধা দেয়, তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভের সুযোগ কমবে এবং কৃষকরা তাদের ফসলের প্রকৃত মূল্য পাবে।’
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, “আমাদের হিসাব অনুযায়ী হিমাগার খরচ ও পরিবহন খরচ ধরলে প্রতি কেজি আলুর খরচ সর্বোচ্চ ২০ টাকা। বাজারে এর বেশি দাম হওয়া অপ্রয়োজনীয়। বাজার তদারকির মাধ্যমে এই সংকট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।”
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available