স্পোর্টস ডেস্ক: অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহিমের দারুণ ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে লঙ্কানদের ৬ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বুধবার শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে তোলে ২৫৫ রান। বাংলাদেশ জিতে যায় ৩২ বল বাকি রেখেই।
প্রথম বলে উইকেট হারানোর পর ক্রিজে গিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ১২২ রানে অপরাজিত থাকেন শান্ত। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। ১২৯ বলের ইনিংসে ১৩ চারের সঙ্গে দুটি ছয় মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৮৪ বলে ৭৩ রান করে।
দুজনের ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১৭৫ বলে ১৬৫ রান। পঞ্চম উইকেট যা দেশের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি এটি।
ম্যাচের শুরুতে টস জিতে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক কুসাল মেন্ডিস বলেন, ২৮০ রান ছাড়াতে পারলে এই উইকেটে হতে পারে ভালো স্কোর। সেই লক্ষ্যে তাদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। পাথুম নিসাঙ্কা ও আভিশকা ফার্নান্দো রান তুলতে থাকেন বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। নতুন বলে কার্যকর হতে পারেননি তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল হক। পাওয়ার প্লের ভেতর তাইজুল ইসলামের স্পিন এনেও লাভ হয়নি।
দশম ওভারে ৭১ রানে থামে এই উদ্বোধনী জুটি। নিজের প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি হজম করা তানজিম হাসান পরের ওভারে দলকে এনে দেন ব্রেক থ্রু। বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন আভিশকা (৩৩ বলে ৩৩)।
তানজিমের সেটি কেবল শুরু। পরের দুই ওভারে আরও দুটি উইকেট নিয়ে তিনি নাড়িয়ে দেন শ্রীলঙ্কাকে। ২৮ বলে ৩৬ রান করে নিসাঙ্কা আউট হন অদ্ভুতভাবে। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাটের নিচের কানায় বল লেগে ধরা পড়েন তিনি গালিতে। সাদিরা সামারাউইক্রমা আউট হন বাজে শটে। উইকেটের পেছনে ডাইভিং ক্যাচ নেন মুশফিক।
১৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন চারিথ আসালাঙ্কা ও কুসাল মেন্ডিস। তবে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে আসালাঙ্কাকে (১৮) বোল্ড করে জুটি ৪৪ রানে থামিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শ্রীলঙ্কা আরেকটি ভালো জুটি পায় এরপর। মেন্ডিস ও জানিথ লিয়ানাগে দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। এই জুটির সময় মনে হচ্ছিল, তিনশ রান খুবই সম্ভব লঙ্কানদের। ৩৭তম ওভারে তাদের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৯৩।
এরপরই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের আলগা কিছু শট আর বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তাসকিনকে তুলে মারতে গিয়ে মেন্ডিস বিদায় নেন ৭৫ বলে ৫৯ রান করে। জুটি থামে ৬৯ রানে।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা গিয়ে একটি চার ও ছক্কা মারার পর তাসকিনের বলেই আউট হন র্যাম্প শট খেলে। শরিফুলকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে লিয়ানাগের ইনিংস শেষ হয় ৬৯ বলে ৬৭ রান করে। শেষ চার ব্যাটসম্যানের কেউ পারেননি দুই অঙ্ক ছুঁতে।
৫৮ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারায় তারা, খেলতে পারেনি পুরো ৫০ ওভারও।
শুরুটা ভালো না করলেও পরে তিনটি করে উইকেট নেন তাসকিন ও শরিফুল। শুরুতে তানজিমের তিন উইকেট তো ছিলই।
সেই পুঁজি নিয়েও জয়ের সম্ভাবনা ভালোভাবেই জাগিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। রান তাড়ায় প্রথম বলেই লিটন কুমার দাসকে হারায় বাংলাদেশ। লাহিরু মাদুশাঙ্কার লেংথ বল স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি।
এই নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৮৯ ইনিংসে ১৩ বার শূন্যতে ফিরলেন লিটন। এর ৬টিই ‘গোল্ডেন ডাক।’ বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশিবার প্রথম বলে আউট হয়েছেন কেবল হাবিবুল বাশার (৭ বার)।
দ্বিতীয় ওভারে প্রামোদ মাদুশানের ওয়াইড থেকেই বাইসহ ১১ রান আসায় একটু আলগা হয় চাপ। কিন্তু পরের ওভারেই মাদুশাঙ্কাকে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার (৩)।
এরপর মাদুশানের বল যখন তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে উপড়ে দেয় অফ স্টাম্প, বাংলাদেশ তখন ধুঁকছে ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে।
ক্রিজে গিয়েই পাল্টা আক্রমণে সেই চাপ সরিয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। শান্তর শুরুটা ছিল ধীরস্থির। প্রথম রানের দেখা পেতে তার লাগে ১০ বল। তবে তিনিও সময়ের সঙ্গে সাবলীল হয়ে ওঠেন।
পায়ে ক্র্যাম্প করার পর মাহমুদউল্লাহ অবশ্য আউট হয়ে যান ৩৭ বলে ৩৭ রান করে। তবে ৬২ বলে ৬৯ রানের এই জুটিই পথে ফেরায় দলকে।
সেই পথ থেকে সরেননি শান্ত ও মুশফিক। শ্রীলঙ্কান বোলাররাও পারেননি তাদেরকে তেমন বিপাকে ফেলতে।
রাতের শিশির অবশ্য কাজ কঠিন করে তুলেছিল বোলারদের। তবে শান্ত ও মুশফিকের কৃতিত্ব তাতে কমছে না।
৫২ বলে ফিফটি ছোঁয়া শান্ত শতরানে পৌঁছান ১০৮ বলে। মুশফিকের ফিফটি আসে ৫৯ বলে।
মাইলফলক ছুঁয়েই না থেমে কাজ শেষ করেই ফেরেন দুজন।
সিরিজের পরের ম্যাচ একই মাঠে শুক্রবার।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available