বিপ্লব তালুকদার, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির সামাজিক উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান অরুণালোক থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১ দিকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে রওনা করি। উদ্দেশ্য কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা। সকাল হতে না হতেই কক্সবাজার শহরে এসে পৌঁছালাম। এই ট্যুরে দায়িত্ব ছিলেন সুমন আর্চায্য,পরিমল দেবনাথ, সোমেন সরকার ও বিমল দেবনাথসহ আরও অনেকেই। আর আমাদের এই যাত্রা পথে সঙ্গী হয়েছিলেন ৭০ থেকে ৮০জন।
এইবার যেতে হবে জাহাজঘাটে। যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন টমটম গাড়ি। পরিমল তার সঙ্গীদের নিয়ে শীতের সকালে টমটম গাড়ি সংগ্রহ করলেন। সবাইকে নিয়ে রওনা দেওয়া হলো। প্রায় ১ ঘন্টা সময় নিয়ে এসে দেখি জাহাজঘাটে মানুষের দীর্ঘ লাইন। জাহাজঘাটে এসে যে যারযার মতো করে নাস্তা করে নিলেন।
উদ্দেশ্য কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন যাত্রা। ঘড়ির কাটায় সকাল ৯ টায় ছেড়ে দেয় লঞ্চ। এরপর শুরু হয় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজে সমুদ্র ভ্রমণের আনন্দময় যাত্রা।
আমরা ইনানী থেকে লঞ্চে চড়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছলাম। এটি আমার দ্বিতীয় ভ্রমণ, আবার অনেকেই প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। উত্তেজনা বেশ ছিল। সিট ভাড়া করলেও বসে থাকেনি কেউ। দেখেছে কেবল দু’পাশের নীল জল, নাফ নদী আর নদীর ওপারে মিয়ানমারের আরাকান।
সেদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো, দ্বীপে হাঁটাহাঁটি আর সূর্যাস্ত দর্শন। ছেঁড়া দ্বীপ যদিও সেন্ট মার্টিন দ্বীপেরই একটি অংশ। নৌকায় করে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক। মাত্র ৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এই দ্বীপে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানায় জমি কেনা, এমনকি কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ আইনত নিষিদ্ধ। গাঢ় নীলের মাঝখানে প্রবাল, কাঁকড়া আর কেয়াবনে জড়ানো ছেঁড়া দ্বীপ আমাদের ধরে রাখল গোধূলি অবধি।
দ্বিতীয় দিন দুপুর পর্যন্ত সময়টা কেবল সেন্ট মার্টিনকে নানান আঙ্গিকে দেখার পালা। প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল 'জাজিরা'। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ আছে। এখানকার বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এ অঞ্চলের অধিবাসী নয়।
শেষ দিন। খুব ভোরে সবাই ওঠে পড়ল। খালি পায়ে বালিতে কেউ হাঁটছে দল বেঁধে । কেউ নেমেছে ভাড়া করা সাইকেল নিয়ে। কোথাও আমাদের নামতে হয়েছিল বালি দেখে, কোথাও থামতে হয়েছিল পাথর দেখে। ছবি তুলতে পুরো দ্বীপ চক্কর দেয়ার লোভ সামলাতে হয়েছে অনিচ্ছায় আর সময়ের অভাবে।
আরেক দফা স্নান আর যৌথ ছবি তোলার হুল্লোড় বয়ে গেল দুপুর অবধি। এখনি ফিরতে হবে। এই বার্তায় লাঞ্চের পর কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে থাকলো হোটেল লাউঞ্জে, কেউ ঝটপট সেরে নিল কেনাকাটা। কর্ণফুলী করে যখন ফিরছি কক্সবাজার, শ্রান্তিতে সবার চোখ তখন ঘুমে ঢুলু ঢুলু। তবু শেষ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে ভেবে কেউ বসে রইল না। জলের পাশে দাঁড়িয়ে দেখল কেবল সবাই জলের নাচন।
শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছালাম কক্সবাজার। লঞ্চ থেকে নেমে টমটম গাড়িতে উঠে পরলাম হোটেলের উদ্দেশে রওনা করি। হোটেল আগে থেকেই থাকার জন্য রুম বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছিল। গাড়ি থেকে নেমে আমরা শহরের পাশে হোটেল গ্যালাক্সিতে সবাই উঠে একটু বিশ্রাম নিলাম ।
কক্সবাজার ট্যুর ঘিরে সবার মধ্যে ছিল উদ্দীপনা। ৩ দিনব্যাপী এ ভ্রমণযাত্রায় গন্তব্য ছিল সুগন্ধা সৈকত, লাবণী পয়েন্ট, ফিশ ওয়ার্ল্ড, ইনানী সৈকত, পাটুয়ারটেক ও হিমছড়ি। ঘোরাঘুরি, ছবি তোলা, খাওয়াদাওয়া, আড্ডা ও গানের মধ্য দিয়ে রঙিন সময়গুলো অতিবাহিত হয় আমাদের । রোদের মধ্যে সমুদ্রের নীল জলরাশি ঘিরে প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে সকলে।
হোটেলে প্রবেশের পর আমরা বিশ্রাম নিয়ে হোটেলের পাশের রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করি। এরপর আবার হোটেলে ফিরে গিয়ে সৈকতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ি। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের গিয়ে সবাই উচ্ছ্বাস-আনন্দ নিয়ে সমুদ্রের নীল জলরাশির ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেদের সোনালী সময়কে ছবিবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সমুদ্রের জলরাশি আমাদের মনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে। দুপুরে আমরা হোটেলে ফিরে যাই এবং ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই। এরপর বিকেলে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডে যাই।
ফিশ ওয়ার্ল্ডে সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীদের বৈচিত্র্য যেন আমাদের সমুদ্রযাত্রাকে ভিন্নতা দেয়। ফিশ ওয়ার্ল্ড থেকে বেরিয়ে আমরা কক্সবাজারের জনপ্রিয় বার্মিজ মার্কেটে যাই। মার্কেট থেকে ঘোরাঘুরি, খাওয়াদাওয়া ও কেনাকাটা করি। এর পরে শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে সুগন্ধা পয়েন্টের কাছেই একটি রেস্তোরাঁতে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে যাই। আমাদের এ আনন্দভ্রমণের সঙ্গী ছিল অরুণালোকের সদস্য বিমল, সুমন, প্রভাত, পরিমল, সোমেন, উৎপল,রুপ কুমার ,সুমন, সজল ,সবুজসহ নাম না জানা আরও অসংখ্য সদস্য।
উল্লেখ্য, ট্যুর শুরু হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে খাগড়াছড়িতে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় ট্যুর। স্মৃতিময় দিনগুলোর ঘটে ইতি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available