কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কামারদের যেন দম ফেলার সময় নেই। পবিত্র ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশু কাটাকুটির জন্য চাই ধারালো দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুরি। এসবের চাহিদা পূরণে কামারদের কাজ চলছে পুরোদমে। কয়লার চুলোয় দগদগে আগুনে গরম লোহায় ওস্তাদ-সাগরেদের ছন্দময় পেটাপিটিতে মুখর কামারশালা। ধারালো সরঞ্জাম শান দিতে অনেকে চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকা।
বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়লেও তাদের তৈরি জিনিসের দাম বাড়েনি বলে জানান গৌরাঙ্গ কর্মকার। তাঁর ভাষ্য, আগে পাথর কয়লা এক বস্তা বা ৪০ কেজির দাম ছিল ৬০০ টাকা, এখন বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা হয়ে গেছে। আগে ৬০ টাকায় র্যাত পাওয়া গেলেও এখন দাম ৩৫০ টাকা। লোহা ছিল ৪০ টাকা কেজি। এখন ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ ব্যবসায় যে টাকা আয় হয়, তা দিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজে চলে গেছেন।
কালাই পৌরসভার হিন্দুপাড়ার প্রবীণ কামার বিশ্বনাথ কর্মকার, পুনটের নীরাঞ্জন কর্মকার ও দুলাল কর্মকার, হারুঞ্জার গোবিন্দ কর্মকার, সুমন কুমার, মাত্রাইয়ের রবিচরণ ও শ্রীচরণ কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদে হাজার হাজার গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ কোরবানি হয়। এসব পশু জবাই থেকে শুরু করে রান্না পর্যন্ত দা-বঁটি, ছুরি, চাপাতিসহ ধাতব হাতিয়ারের প্রয়োজন পড়ে।
কামাররা জানান, দা আকৃতি ও লোহাভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০ থেকে ১২শ, হাড় কোপানোর চাপাতি ৭০০ থেকে ৮০০, বঁটি ৪৫০ টাকা এবং ধার করার স্টিল প্রতিটি ৮০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। পুরোনো যন্ত্রপাতি শান দিতে ৩০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে এক দামের কারবার নেই। বিক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করে ক্রেতা দাম চূড়ান্ত করতে পারেন। গত বছর দা ৩০০, বঁটি ৪০০, ছুরি ৮০০ এবং চাপাতি ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চীনে তৈরি চাপাতিসহ মাংস কাটাকুটির সরঞ্জামের দৌরাত্ম্যের কারণে দেশি তৈরি জিনিসের কদর কমে গেছে বলে জানান মঙ্গল কর্মকার। তাঁর ভাষ্য, তাদের তৈরি সরঞ্জামের দাম একই রকম থাকলেও উপকরণের দাম বেড়েছে। তাঁর কর্মচারীকে প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। অথচ আয় তেমন হয় না। বলিশিব সমুদ্র গ্রামের আদিত্যনাথ কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে কাগজ, ফুলের মালা, ঘাস, খড়, ভুসি, খৈল, কাঁঠালপাতা, রং, চাটাই, দড়ি ও গাছের গুঁড়ি তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও।
চীনের তৈরি জিনিসের কারণে কামারদের তৈরি সরঞ্জাম হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন শিক্ষক সুমির কুন্ডু। তাঁর মতে, তাদের এ পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। অন্য পেশার মতো কামারদের পেশায়ও সরকারি ও বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা উচিত।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আবুল হায়াত বলেন, উপজেলা প্রশাসন অবহেলিত জনগোষ্ঠীর উপর সবসময়ই অনুগামী। তাদের কোনো কামার বয়স্ক হলে বয়স্ক ভাতা এবং নারী হলে বিধবা ভাতা পাবেন। তারা যদি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের আবেদন করেন, তাহলে তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available