নরসিংদী প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম গ্রে-কাপড়ের বাজার নরসিংদীর মাধবদী। চলমান পরিস্থিতিতে বিক্রি কমে গেছে গ্রে-কাপড়ের। ফলে সংকটে বস্ত্র-শিল্পের নগরী হিসেবে পরিচিত এখানকার ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে হরতাল, অবরোধে কাপড় উৎপাদনের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি ও খুচরা বাজারে বেচা-বিক্রি কম হওয়ায় মন্দা দেখা দিয়েছে গ্রে-কাপড়ে বাজারে।
জেলায় প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত শহর মাধবদীতে ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার সাপ্তাহিক কাপড়ের বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, শহর জুড়েই রয়েছে শত শত ‘গ্রে’ কাপড় উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের বিক্রয়কেন্দ্র। এই মহাজনদের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা এই মন্দা বাজার ও সংকটের কথা জানান।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী জেলায় উৎপাদিত কাপড় দেশের ৭০ ভাগ কাপড়ের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এ জেলার ৬টি উপজেলায় কাপড় উৎপাদন করা হলেও নরসিংদী সদরে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। এখানে প্রায় ২ হাজার টেক্সটাইল/পাওয়ার লোম মিল-কারখানা রয়েছে। প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার মাধবদী বাজারে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ধরনের ‘গ্রে’ কাপড় । এখানে উৎপাদিত কাপড়ের মধ্যে রয়েছে পপলিন, ভয়েল, ভিসকস, অরগেন্ডি, লিলেন, মার্কিন ও টিস্যু কাপড়। অনেকে কারখানা থেকে উৎপাদিত সাদা ‘গ্রে’ কাপড় রং ও প্রসেসিং করে সরাসরি দেশ-বিদেশে রপ্তানি করেন।
এছাড়া, সাদা গ্রে-কাপড়গুলো কালার ও ছাপা প্রিন্ট করে সপ্তাহে বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর বাবুরহাটে বিক্রি করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে মাধবদী বাজারের কয়েকজন কাপড় বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতি বছর শীতকালের শুরুতে ভালো একটা কাপড়ের বাজার পাওয়া যায়। কিন্তু এবার মন্দা বাজার চলছে। কাপড় উৎপাদন করে লোকসান দিতে হচ্ছে। ফলে কারখানার অনেক মেশিন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেকের কারখানায় শুধু এক শিফট মেশিন চলছে।
ডলার সংকট, দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা জামা-কাপড় কেনাকাটা করার টাকা পাবে কোথায়। এর মাঝে দেশের রাজনৈতিক ইস্যুতে অবরোধ ও হরতালে চলছে। অবরোধের প্রভাবে খুচরা বাজারে কাপড় বিক্রি কম হওয়ার ফলে উৎপাদিত গ্রে-কাপড়ের বাজার মন্দা হয়ে পড়ছে।
শফিকুল ইসলাম মিন্টু নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, করোনার আগে এক গজ ভয়েল কাপড় বুনতে খরচ হতো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। তা পাইকারি বাজারে বিক্রি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখেছি। দিনদিন ব্যবসা নিয়ে নানা সংকটে পড়ে যাচ্ছি। অথচ, এখন গ্রে-কাপড় বিক্রি করে লোকসান দিতে হচ্ছে। সাদা কাপড় রং ও প্রসেসিং করে ঢাকার ইসলামপুর, গাউছিয়া মার্কেট, মাধবদীর বাবুরহাটে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা মুশকিল হয়ে গেছে।
মাধবদী স্কুল সুপার মার্কেটে আফসানা নামে এক নারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সালোয়ার-কামিজের জন্য কাপড় কিনতে এসেছেন। কিন্তু প্রতি গজ ভয়েল কাপড় ৬৫ টাকা থেকে শুরু। পপলিন ৬০ টাকা, বেক্সি ভয়েল দাম চাচ্ছে ১২০ টাকা। কাপড়ের দাম বেশি হওয়ায় তিনি না কিনেই চলে যাচ্ছেন।
মাধবদীর ব্যবসায়ী রাজীব আহমেদ বলেন, মহাজনরা মেশিন শুধু রাতে চালায়। আমাদের প্রোডাকশন অর্ধেক কমে গেছে। এখন নৃত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেশি। যেখানে সংসার চালাতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে কাপড় কিনা বর্তমানে বিলাসিতা। তাই কাপড় উৎপাদন ছেড়ে দিয়ে আমরা বিকল্প পেশা খুঁজতেছি।
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আব্দুল মোমেন মোল্লা জানান, এই জেলায় দুই হাজার কল-কারখানা রয়েছে। এই মন্দা বাজারে অনেক মালিক কাপড় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কারখানা ও মেশিন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে প্রোডাকশনে কাজ করা শ্রমিকদের আয় কমে গেছে ও বেকার হয়ে পড়ছে অনেকে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু নির্বাচনমুখী হয়ে পড়েছে দেশ, পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কিন্তু ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের স্বার্থে দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া জরুরি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available