গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা সদর, ডাকুয়া ও পানপট্টি ইউনিয়ন অত্যন্ত নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা। এসব ইউনিয়নের যেসব বেড়িবাঁধ রয়েছে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধ পুননির্মাণের কথা থাকলেও বেশকিছু জটিলতার কারণে এখনো তা সম্ভব হয়নি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে যখন পানপট্টি বোর্ড এলাকায় বাঁধটি বুড়োগৌরাঙ্গ নদীর তীব্র গতির ঢেউয়ে ভাঙন শুরু হয় তখন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল সেখানে উপস্থিত হয়ে বাঁধ রক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে দুইটি ভেকু মেশিন দ্বারা প্রায় ১৬ ঘণ্টা মাটি কেটে ফেলে এবং কর্মকর্তা, শিক্ষক ও স্থানীয় যুবকদের নিয়ে জিওব্যাগ বস্তা ফেলে মূল বাঁধের পাশ দিয়ে আরেকটি বাঁধ তৈরি করা হয়।
বিষয়টি সিনেমাটিক ও আপাত হাস্যকর মনে হলেও ঘূর্ণিঝড় শেষে দেখা গেছে ঢেউয়ের তোপে মূল বাঁধটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আর নতুন বাঁধটি টিকে গেছে। এছাড়া ডাকুয়া ইউনিয়নের তেঁতুলতলায় উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় নতুন করে কয়েকহাজার জিওব্যাগ ফেলা হয় দুর্যোগকালীন সময়। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব বেড়িবাঁধ বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শেষমুহূর্তের কর্মকাণ্ডের জন্য বিলীন হয়ে যায়নি।
এসব বেড়িবাঁধ রক্ষা করতে না পারলে গলাচিপা পৌরসভাসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে পানিতে প্লাবিত হতো এবং ভেসে যেত হাজার হাজার ঘর-বাড়ি, পশু-পাখি, ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের ও রাস্তাঘাট। গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কাজের জন্য সব শ্রেণির মানুষের ভূয়সী প্রশংসায় ভাসছেন।
তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে পানপট্টি, বোয়ালিয়া, রতনদি তালতলী, ডাকুয়া, আমখোলা, চিকনিকান্দি, গজালিয়া, গোলখালী, নলুয়াবগী, কলাগাছিয়া, চরকাজল, চরবিশ্বাস, গলাচিপা পৌরসভাসহ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া অসহায় মানুষের মধ্যে চিরা, মোম, মশার কয়েল, পানি, স্যালাইন, জেরিকান, বিস্কুটসহ নানা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন উপজেলা প্রশাসন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ। সোমবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, ঘূর্ণিঝড় রোমেল এ উপজেলার পাকা-কাঁচা সড়ক ভঙন, মাছের ঘের ভেসে গেছে, ঘরবাড়ি গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১৫০ কোটি টাকা।
তিনি আরো জানান, এ উপজেলা রাবনাবাদ, আগুনমুখা, তেতুলিয়া, বুড়াগৌরাঙ্গ নদী সবদিক দিয়ে ঘেরা। প্রচণ্ড ঝড়ে বুড়াগৌরাঙ্গ, তেতুলিয়া, রাবনাবাদ এবং আগুনমুখো নদীর পানি স্বাভাবিক জোঁয়ারের চেয়ে ১০-১২ ফুট উচ্চতায় বেড়ে গেলে ইউনিয়ন রক্ষাবাঁধ ভেঙে প্রায় ৩০ থেকে ৫০টি গ্রাম তলিয়ে যায়। চর কারফার্মায় বেড়িবাঁধ না থাকায় সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। সম্পূর্ণ ঘর ভেঙেছে ৯৪৭টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সহস্রাধিক, মাছের ঘের সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১৫৭ হেক্টর এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৭৬০ হেক্টর, যার মূল্য প্রায় ২.৫ কোটি টাকা, বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫.৬ কি.মি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০-৫০ কি.মি, বনাঞ্চল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৩১০ হেক্টর এবং নার্সারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হেক্টর, কাঁচা-পাকা সড়ক সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ১০০ কি.মি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক, গৃহপালিত পশু-পাখি ভেসে গেছে প্রায় ৫ হাজার।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, এসব ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে এবং সরকারি সাহায্যের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available