পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে খরচ বাঁচাতে গরুর হালের পরিবর্তে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন নেপেন (৪০)-শুভাষীনি (৩৫) দম্পতি।
এই দম্পতির আয়ের উৎস বলতে অন্যের জমি বর্গাচাষ আর খালে-বিলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা।
এতে যা আয় হয় তা দিয়েই মেটাতে হয় সংসারের সাত সদস্যের মৌলিক চাহিদা। তাই উৎপাদন খরচ বাঁচাতে গরুর হালের পরিবর্তে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন তারা।
এ কাজে পালাক্রমে কখনো স্বামীকে আবার কখনো স্ত্রীকে গরু এবং চাষির ভূমিকা রাখতে হচ্ছে তাদের।
৪ ফেব্রুয়ারি রোববার বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের পবনাপুর (চরেরহাট) গ্রামে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
অন্যেরা যখন আধুনিক কৃষিযন্ত্রের সাহায্যে জমি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন ব্যতিক্রম শুধু নেপেন-সুভাষীনি দম্পতি।
তীব্র ঠান্ডা উপেক্ষা করে পানিতে ভিজে জমি সমান করতে শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে হালচাষ করছেন তারা। বাঁশের তৈরি মইয়ের দু’পাশে দড়ি বেঁধে দুহাতে টেনে গরুর ভূমিকা রাখছেন সুভাষীনি এবং শক্ত হাতে মই চেপে রেখেছেন নেপেন। ফলে কাঁদাজলে ভেজা উঁচু-নিচু জমি সমান হয়ে চাষের উপযোগী হয়ে উঠছে।
জানতে চাইলে এ দম্পতি জানান, তাদের নিজেদের কোনো জমি নেই। প্রায় এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন তারা। বর্গা নেওয়া জমি থেকে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার অর্ধেক পান জমির মালিক। বাকি ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের যোগান মেটাতে হয়। তাই উৎপাদন খরচ কমাতে টাকা দিয়ে গরুর হাল না কিনে নিজেরাই জমিতে মই দিচ্ছেন।
তারা আরও বলেন, তাদের পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে মাধব এসএসসি পাশ করেছে। ছোট ছেলে নিখিল, মেয়ে লক্ষ্মী ও প্রতিমা হাইস্কুলে পড়াশুনা করছে। এছাড়া অর্জুন নামে কোলের এক সন্তান রয়েছে তাদের।
পবনাপুর রেনুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান চান মিয়া বলেন, নেপেন-সুভাষীনি দম্পতি আমার প্রতিবেশী। তারা জেলে পরিবারের সদস্য। সমাজে টিকে থাকার জন্য তারা লড়াই করে চলেছেন।
পবনাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জহুরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি এবং হাল চাষের পর মাটি সমান করতে মই দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত এ কাজটি গরু দিয়ে করা হয়। কিন্তু নেপেন-সুভাষীনি দম্পতি আর্থিক সংকটের কারণে নিজেই এ কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের সরকারিভাবে সহায়তা করলে ভালো হতো।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available