আফজাল হোসেন রুমেল, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘প্রকৃতি কন্যা’ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত দেশের সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক জলপ্রপাত হিসেবে পরিচিত এবং দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসুর পদচারণে মুখর হয়ে থাকে জলপ্রপাত এলাকা। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে এলে চোখে পড়বে উঁচু উঁচু পাহাড়ি টিলায় দিগন্তজোড়া চা বাগান। টিলার ভাঁজে ভাঁজে খাসিয়াদের পানপুঞ্জি ও জুম চাষ। পাহাড়িদের সনাতনী বাড়ি ঘর ও জীবনযাত্রা দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব। যা পর্যটকদের কেবল আনন্দই দেয় না, গবেষক ও কবি-সাহিত্যিকরা খুঁজে পান লেখার রসদ। তবে এই সৌন্দর্য ও আনন্দের মাঝেও লুকিয়ে আছে মারাত্মক ঝুঁকি।
সম্প্রতি পর্যটকদের একাংশকে দেখা যাচ্ছে, জলপ্রপাতের প্রায় ২০০ ফুট শীর্ষে উঠে ছবি তোলা, ভিডিও তৈরি কিংবা প্রকৃতি উপভোগের জন্য অবস্থান নিতে, যা হতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ। তারা ভিডিও তৈরি করতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিশোর-তরুণরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও পাহাড়ের চূড়ায় উঠছেন। সম্প্রতি এমন কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের তৎপরতা পর্যাপ্ত নয়। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় কিছু পর্যটক অসচেতনভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উঠে যাচ্ছেন, যা যে কোন সময় প্রাণঘাতী হতে পারে।
জলপ্রপাতে ঘুরতে আসা পর্যটক তানজিলুর রহমান বলেন, ‘এই জায়গাটা সত্যিই অনেক সুন্দর, তবে কিছু মানুষ ছবি তোলা ও ভিডিও তৈরির নেশায় পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ চূড়ায় উঠে যায়। এটা একেবারেই ঠিক না। আমরা চাই, প্রশাসন যেন এই ব্যাপারে আরও কঠোর হয়।’
একই ধরনের মন্তব্য করেন চট্টগ্রাম থেকে আগত পর্যটক ফাইমা রহমান, ‘নিরাপত্তা আগে। আমরা এখানে প্রকৃতি উপভোগ করতে এসেছি, জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ছবি তোলা বা অ্যাডভেঞ্চার খোঁজা মোটেই গ্রহণযোগ্য না। সবাইকে সচেতন হওয়া উচিত।’
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মহসিন আহমদ জানান, ‘আমরা নিয়মিত টহল দেই এবং পর্যটকদের নিরাপদ স্থানে থাকার পরামর্শ দেই। ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেউ উপরে উঠতে পারে না। যারা উঠার চেষ্টা করেন তাদের আমরা সতর্ক করছি। তবে পর্যটকদের নিজেদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। ভবিষ্যতে নিরাপত্তা জোরদারে আরও উদ্যোগ নেয়া হবে।’
মাধব ছড়া বিট কর্মকর্তা সোহেল রানা জানান, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে কয়েক হাজার পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এ সময় কিছু পর্যটক ঝর্ণার যেদিক দিয়ে পানি পড়ে, সেই বিপজ্জনক স্থানে উঠে পড়েন, যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।’
আমরা অনেক পর্যটককে সেই স্থান থেকে নিচে নামিয়ে এনেছি এবং তাদের সচেতন করেছি যেন ভবিষ্যতে তারা এমন ঝুঁকি না নেয়। তবে সমস্যা হলো, ঝর্ণার ওপরে ওঠার জন্য বেশ কয়েকটি পথ রয়েছে। মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের সামনের দিক দিয়ে যারা ওঠেন, তাদের আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি এবং প্রয়োজনে সতর্ক করি। কিন্তু অন্যান্য পার্শ্ববর্তী গোপন পথ দিয়ে যারা ওপরে যান, তারা অনেক সময় আমাদের নজরে আসেন না।’
এদিকে বড়লেখা সদ্য সাবেক রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাসের সূত্র মতে, মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে গত ৪৩ বছরে অন্তত ৩২ জন পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে (পরিসংখ্যান সংগ্রহের শেষ সাল ২০২৪)। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু চূড়ায় উঠার সময়ে পা ফসকে নিচে পড়ে গিয়ে বহু অনভিজ্ঞ ট্র্যাকারের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, ঝরনার নিচে সাঁতার কাটতে নেমে গভীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও বহু মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘প্রাকৃতিক দৃশ্যের মাঝে মাধবকুন্ডের ঝর্ণা দুর্লভ আনন্দের উৎস হলেও, পর্যটকরা যদি সচেতন না হন তাহলে প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়।’ পরবর্তীতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হতাহতের খবর পাওয়া গেলেও, আরও কোনো বিশদ নিহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available