বাবুল আকতার, খুলনা ব্যুরো: খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাংলাদেশ। বিশ্বে যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তা নদীমাতৃক এই দেশের জন্যও আশঙ্কাজনক। জলবায়ু পরিবর্তনে যে ক্ষতি হচ্ছে, তরুণদের অংশগ্রহণে তা কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় তরুণদের আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
১২ আগস্ট শনিবার সকাল ১১টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এনভোলিড লিমিটেডের উদ্যোগে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট-বাংলাদেশ, দ্য আর্থ এবং টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটির যৌথ আয়োজনে ‘এনভোফ্রেম: টেকসই ভবিষ্যতের জন্য জলবায়ু সমস্যার সমাধান’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, তরুণরা এখন অনেক বেশি সচেতন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি সবুজ-শান্ত-শীতল বিশ্ব প্রত্যাশা করে তরুণ সমাজ। আগামীর পৃথিবী হবে তারুণ্যের। এজন্য তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানাতে হবে। যাতে আগামীতে তারা এর প্রভাব মোকাবেলায় নিজেরাই উদ্যোগী হতে পারে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বমঞ্চে প্রথম কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরেন। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তহবিল দেওয়ার ব্যাপারেও তিনি মত দেন।
কেসিসি মেয়র বলেন, পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে এটা স্বাভাবিক। তবে সুন্দরবন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মায়ের মতো আমাদের সবসময় রক্ষা করে আসছে। না হলে এ অঞ্চল আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়তো। তিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আঘাত হানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে নানা দিক তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, রূপসা ও ভৈরব নদী খনন না করলে খুলনা নগরীকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা কঠিন। আমি খুলনাকে পরিবেশসম্মত সুন্দর নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য যা যা করণীয় তাই করবো। যতটাই কঠিন হোক তা বাস্তবায়ন করা হবে।
মেয়র খালেক বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে খুলনার রাস্তা ও ড্রেনের অনেক কাজ শেষ হবে। তখন সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন খুলনা অনেকটাই দৃশ্যমান হবে। সিটি মেয়র পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি বেশি বৃক্ষ রোপণের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, সারা বিশ্ব আজ যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে সোচ্চার হচ্ছে। নারীরা যেমনি সমাজে একটি রোল প্লে করে, তেমনি যুবকরাও সমাজ-পরিবেশ পরির্তনে গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করে। এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতির মুখে। অথচ তহবিল ঠিক মতো আসে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে কাজ করতে হবে। এর প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষা করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তবতা। প্রতিটি সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। কিন্তু আমরা এর গতি বাড়িয়ে দিয়েছি। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তার পেছনে কাজ করছে মানুষের চাহিদা। এজন্য পরিবেশকে বাঁচাতে আমাদের বিলাসিতা পরিত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ভৌগলিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় হবেই। ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের পাশাপাশি দ্বীপ অঞ্চলেও বনায়ন হচ্ছে, যা আমাদের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে। এখন আমাদের পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। তিনি এই প্রতিযোগিতায় উপস্থাপিত আইডিয়াগুলোর যাতে বাস্তবিক প্রতিফলন ঘটে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর মো. সানাউল ইসলাম, ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের প্রধান আসমা উল হুসনা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টুওয়ার্ডস সাসটেইনেবিলিটিরর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক নুসরাত জাহান জুহি। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম, দ্য আর্থ’র মামুন মিয়া। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাদিয়া রশ্নি সূচনা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট ৩৬টি দল এ প্রতিযোগিতায় আইডিয়া জমা দেয়। চূড়ান্ত রাউন্ডে নির্বাচিত পাঁচটি দল তাদের সমাধান ধারণা উপস্থাপন করে। তাদের মধ্য থেকে তিনটি দলকে চ্যাম্পিয়ন, প্রথম রানার্স আপ ও দ্বিতীয় রানার্স আপের পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন ৫০ হাজার টাকা, প্রথম রানার্স আপ ৩০ হাজার টাকা এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হিসেবে গ্রহণ করে ২০ হাজার টাকা। অনুষ্ঠানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভাগের ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available