রংপুর ব্যুরো: স্ত্রীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে ডিএমপিতে কর্মরত পুলিশ সদস্য রাব্বি আল মামুন ওরফে ইসতিয়াক ওরফে বুলবুলের লালমনিরহাটের তুষভান্ডার ইউনিয়ের ঘনেশ্যাম গ্রামের বাড়ির দরজায় দুদিন ধরে অনশন করছেন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী আজমির নাহার রেখা।
২৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গেলে সাংবাদিকদের সামনে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী আজ মিন নাহার রেখা জানান, ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটনের পল্টন থানায় পুলিশের উপস্থিতিতে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের ঘনেশ্যাম এলাকার মো. আল আমিনের ছেলে ডিএমপির রাজারবাগ পুলিশ লাইনের এমটি শাখায় পিওএমএ পদে কর্মরত কনটেস্ট (৩৩৭০২) রাব্বি আল মামুন ওরফে ইশতিয়াক বুলবুলের সাথে সরকারি বিধি ও শরিয়া মোতাবেক আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে এক সপ্তাহ আমরা পল্টন থানার পাশে একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করি। পরে সে বাসা ভাড়া নিয়ে আমাকে নিয়ে আসবে এমন আশ্বাসে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি আসার পরে দুই তিন মাস সে আমার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে ও স্ত্রী হিসেবে সবকিছু দেয়। কয়েকদিনের মধ্যে সুন্দর একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তোমাকে ঢাকায় নিয়ে আসবে তুমি এখান থেকেই অনার্স পরীক্ষা দিবে বলে জানায়।
আমি সরল বিশ্বাসে তার উপর ভরসা করে থাকি। কিন্তু ৫,৬ মাস যেতে না যেতেই সে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তখন আমি তার অফিসে গিয়ে আমাকে তার বাসায় নেয়ার জন্য চাপ দেই। তখন সে আবারও নানান টালবাহানা করে আমাকে রংপুরে আমার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এক বছর যেতে না যেতেই আমার সাথে সে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে আমাকে স্ত্রী মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে আমার কাবিননামাসহ সকল ডকুমেন্ট গায়েব করে ফেলে। তবে আমার ফোনে এবং আমার কাছে রক্ষিত ডকুমেন্ট আমি পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের দেখালে তারা আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তোলার জন্য বলে।
কিন্তু সে আজকাল করে আমাকে বাড়িতে নিচ্ছে না এবং স্ত্রীর মর্যাদাও দিচ্ছে না। তাই আমি স্ত্রীর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে তার বাড়িতে এসে অবস্থান করছি।
তুষ ভান্ডার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ ও এলাকার লোকজন জানান, স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে রোববার বিকেলে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা গোপালপুর ইউনিয়নের আজাহার আলীর মেয়ে আজমিন নাহার রেখা আল আমিনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল রাব্বি আল মামুনের বাড়িতে আসলে বাড়ির লোকজন সদর দরজা বন্ধ করে দিয়ে মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেয।
এ সময় মেয়েটি বাড়ির দরজার সামনে অবস্থান নেয়। এলাকার লোকজন আরো জানান ওই ছেলের উচিত বিচার হওয়া দরকার। একটি মেয়ে দুদিন ধরে তার বাড়িতে এসে দরজার সামনে বসে আছে আর সে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার আশা করি। পলাশ মেম্বার আরও জানান, মেয়েটির নিরাপত্তার জন্য আমি পুলিশকে জানিয়ে রাতে গ্রাম্য পুলিশ দিয়ে পাহারা রেখেছি। যাতে মেয়েটির কোন ক্ষতি না হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সদস্য রাব্বি আল মামুন ওরফে ইতিয়াক ওরফে বুলবুলের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজমিন নাহার রেখার সাথে ঢাকায় আমার যা হয়েছে সেগুলো ঢাকায় আবার সমাধান হয়েছে। আমি তার সাথে যা করেছি তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমাকে শাস্তিও দিয়েছেন। ওই মেয়েকে আমি বাড়িতে উঠতে দেব না সাংবাদিকদের যা করার আছে বা ওদের পরিবারও যদি কোন কিছু করতে পারে করুক এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ আহমেদ খন্দকার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। কোন পক্ষ এখানে লিখিত কোন অভিযোগ করেনি। তবে কোন পুলিশের ব্যক্তিগত বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোন হস্তক্ষেপ করা হয় না। তবে কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করে আর তা যদি যাচাই বাছাই করে সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম জানান, বিভিন্ন এলাকার সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পুলিশের বাড়িতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে অবস্থান করছেন এমন বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। আমি তাৎক্ষণিক বিষয়টি কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানিয়েছি। ভুক্তভোরীরা বিচার পাক এটা আমরা সবসময় কামনা করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available