নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার; ভ্যালু চেইন উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০ মে বৃহস্পতিবার ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
সেমিনানে ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, কৃষি খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদনশীলতা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়, সেই সাথে এখাতে ব্যয় ২০ শতাংশ হ্রাসের পাশাপাশি কৃষকের আয় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে এ খাতে সাপ্লাইচেইনের অপর্যাপ্ততা, বাজারে পণ্য প্রবেশাধিকারের সুযোগ না থাকা এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন প্রভৃতি সমস্যার মুখোমুখী হতে হচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে কৃষি যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন ও কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানো, কৃষি গবেষণা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, প্রয়োজনীয় সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন এবং কার্যকর ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
কৃষিখাতের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের লজিস্টিক চেইন এবং মার্কেট চেইন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন বলে, তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমদানি-রফতানিকারকদের সুবিধার্থে খুব শীঘ্রই ঢাকা চেম্বারের একটি পূর্ণাঙ্গ হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হবে, যেখান থেকে ‘আইআরসি’ এবং ‘ইআরসি’ সার্টিফিকেট প্রাপ্তির সকল সুবিধা প্রদান করা হবে। তিনি জানান, এবছরের শেষ নাগাদ ‘যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি)’-এর সেবার সকল কার্যক্রম পেপারলেস করা হবে, ফলে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি হ্রাস পাবে।
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট এগ্রিকালচারের কোন বিকল্প নেই এবং পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কার্যকর ভ্যালু চেইনের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম পাচ্ছে না, অপরদিকে ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য ক্রয় করছে, মধ্যস্বত্তভোগীরা মুনাফা করছে, তাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। দেশের কোন জায়গায় তুলনামূলক কম মূল্যে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, এধরনের তথ্য প্রাপ্তির একটি প্ল্যাটফর্ম প্রণয়নের জন্য তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী তথ্য কাঠামো প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই বলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী অভিমত জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও কৃষি পণ্যের স্ট্যান্ডাডাইজেশন ও সার্টিফিকেশনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. সামসুল আরেফিন বলেন, দেশের কৃষকদের ব্যবহার উপযোগী করে এখাতের তথ্য-প্রযুক্তি তৈরি করা ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের তরুণ সমাজ সাম্প্রতিক সময়ে কৃষিখাতের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে, যেটা অনেক উৎসাহব্যঞ্জক একটি বিষয়। কৃষির উৎপাদিত পণ্য পুনরায় ব্যবহারের উপর মনোযোগী হওয়ার উপর তিনি জোরারোপ করেন। এছাড়াও কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, সাম্প্রতি সময়ে আমাদের কৃষিখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, তবে জলবায়ুন পরিবর্তন জনিক কারণে অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দূর্যোগের ফলে এ খাত প্রায়শই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখী হয়, সেই সাথে প্রচলিত কৃষি পদ্ধতি ব্যবহারের কারণেও উৎপাদন হ্রাস পায়। এমতাবস্থায় আমাদেরকে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের স্মার্ট এগ্রিকালচার প্রাক্টিস’র উপর আরও বেশি হারে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
সেমিনারে আইফার্মার-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ ইফাজ ‘এগ্রো ভ্যালু চেইনে ফ্রন্টিয়ার টেক অটোমেশনের সম্ভাবনা’ এবং সুইসকন্টাক-এর সিনিয়র ম্যানেজার (পোগ্রাম) মোহাম্মদ সাকিব খালেদ ‘স্মার্ট এগ্রিকালচার : ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জস ইন ভ্যালুচেইন ডেভেলমেন্ট’ বিষয়ক দুটো মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ফাহাদ ইফাজ বলেন, কৃষি খাতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্যের বাজারের অভিগম্যতা বাড়ানো, উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তিনি জানান, ‘ম্যাকেনজি অ্যান্ড কোম্পানি’-এর তথ্য মতে, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশি^ক জিডিপিতে ফ্রন্টিয়ার টেকনোলোজির অবদান থাকবে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তাই এখাতের উন্নয়নে নীতি সহায়তা এবং একটি কার্যকর ইকোসিস্টেম একান্ত আবশ্যক।
মোহাম্মদ সাকিব খালেদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি দেশের কৃষিখাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, যা মোকাবেলায় আমাদেরকে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, লাইভস্টক খাতে স্থানীয় বিনিয়োগ বেড়েছে এবং আশা করা যায় আগামী ১০ বছরে এটি দ্বিগুন হবে। কার্যকর সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, পণ্য আহরণ পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকবেলায় সক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশস্থ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এর উর্ধ্বতন কৃষিবিদ ড. মো. আব্দুল কাদের, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত পরিচালক (এগ্রিকালচার ক্রেডিট ডিপার্টমেন্ট) ড. মো. আবু বাকের সিদ্দিকী, এ্যাকুয়ালিঙ্ক বাংলাদেশ লিমিটেড’র সিইও সৈয়দ রিজবান হোসেন, উইন ইনকর্পোরেট-এর সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা ড. কাশফিয়া আহমেদ, ড. ক্যাশআই ইনকর্পোরেশন-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেদিনা আলী এবং ক্রান্তি এসোসিয়েটস লিমিটেড’র পরিচালক ও সিইও ড. মোহাম্মদ রিশালাত সিদ্দীকি অংশগ্রহণ করেন।
আলোচকবৃন্দ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিসমূহ আমাদের দেশের মানুষের চাহিদা ও সক্ষমতার নিরিখে সমন্বয়, স্থানীয়ভাবে প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে মূল্যের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, কৃষকের বোধগম্যকরে তথ্যাদি উপস্থাপন, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা, লজিস্টিক সুবিধা নিশ্চিতকরণ, কৃষি পণ্যের স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়ানো, মানবম্পদের দক্ষতা উন্নয় এবং গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধির উপর জোরোপ করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মোঃ জুনায়েদ ইবনে আলী এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি ও বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available