রংপুর ব্যুরো: তিস্তার পানি কমতে শুরু করেছে। ৫অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নীচ ও কাউনিয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। ফলে রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। ৪ অক্টোবর বুধবার সকালে থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি বাড়লেও রাত ১০ টার পর থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করে। ফলে অঞ্চলে মানুষের মধ্যে বন্যার আতঙ্ক কিছুটা কমেছে।
এদিকে ব্যারাজের ৪৪ টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বাংলাদেশের তিস্তা বেষ্টিত উত্তরাঞ্চলেও বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পানিতে চরের বিভিন্ন স্থানে শত শত হেক্টর জমির ধান ও শীতকালীন সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কীকরণ বার্তায় আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা এবং ভারত থেকে আসা পানিতে যেকোনো সময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের কেল্লার পাড়ে আনা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধারকারী মিনি জাহাজ। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে আতঙ্কিত তিস্তার দুপাড়ের মানুষের অনেকেই গবাদিপশু, ধান-চালসহ ঘরবাড়ির গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সরিয়ে নিয়েছেন। কৃষকরা সবথেকে বিপাকে পড়েছেন আগাম লাগানো পাকাধান নিয়ে। এখন পানি কমতে শুরু করায় তাদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। অনেকেই ধান কেটে ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামান্না নাহিদ বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আছে, এই বন্যাটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এজন্য আমরা জনগণকে সতর্ক করছি। তাদের ধান-চাল, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিভিন্ন স্কুল-কলেজ এবং আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও উঁচু জায়গাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। উঁচু স্কুলগুলোতে আমরা এরই মধ্যে থাকার জন্য ব্যবস্থা করে রেখেছি।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হক বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হচ্ছে। সর্বসাধারণকে গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সতর্ক থেকে নিকটস্থ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা প্রাইমারি অথবা হাইস্কুলে অবস্থান নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, সতর্কীকরণ বার্তা অনুযায়ী বন্যাটি ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এ কারণে আমরা আগাম নদীপাড়ের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। একজনেরও যেন প্রাণহানি না হয়, মালামালের ক্ষয়ক্ষতি না হয় আমরা তার চেষ্টা করছি। এছাড়াও পানি যতক্ষণ থাকবে, কতক্ষণ এই দুর্গত মানুষদের জন্য শুকনো খাবারসহ প্রয়োজনীয় খাবারের বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে।
রংপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, মডার্ন টেকনোলজির মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ দ্রুত তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হলেই দুর্ভোগগুলো কিছুটা হলেও লাঘব হবে। হিমালয় থেকে নেমে আসা তিস্তা নদীতে সাড়ে ৪ লাখ কিউসেক পানি নিঃস্মরণ ক্ষমতার তিস্তা ব্যারেজ সেচপ্রকল্প বাংলাদেশ নির্মাণ করে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটের দোয়ানীতে। আর এর ঠিক ৭২ কিলোমিটার উজানে ভারত সাড়ে ৬ লাখ কিউসেক পানি নিঃস্মরণ ক্ষমতার গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে একতরফাভাবে অভিন্ন এই নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available