মো. মাইনুল হক, নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীপাড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢালে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন হযরত আলী (৬০)। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। দুই বছর হলো বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভিটে মাটি হারা তার পরিবার।
হযরত আলী বলেন, ‘তিস্তা নদীত পানি বাইল্লেই বুকটা ধপাস করি উঠে! কখন হামার বাড়ি ভাঙ্গি যায়।’
হযরত আলী নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারলেও, দিনমজুর মোশারফ হোসেন ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে খাওয়া নুর বানুর পরিবারের সেই সুযোগ হয়নি। চোখের পলকে বাঁধ ভেঙ্গে তাদের বসতভিটা গিলে নিয়েছে ভয়াল তিস্তা। পরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধের ধারেই আত্মীয়ের বাড়িতে। সেই আশ্রয়টুকুও এখন আর নিরাপদ নয়!
শুধু মোশারফ হোসেন, হযরত আলী, নুর বানুরা নয়, তিস্তার ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বেড়িবাঁধের উপর বসবাস করছেন উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।
গৃহবধূ বিলকিস আক্তার (৩৫) বলেন, 'নদীতে বান আসলেই আতঙ্কে বুক কাঁইপা ওঠে। বাঁধ ভাঙলেই আমাগো ঘরটাও পানিতে ভাসাইয়া নিয়া যাইবো। বাঁধ মজবুত থাকলে ভয় থাকত না।’
ডিমলা উপজেলায় ঝুনাগাছ চাপানিসহ প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার পুরোটাই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত বেড়িবাঁধ ৩৫ কিলোমিটার। ১০ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ২০/২৫ হাজার পরিবার বসবাস করে বাঁধের উপর ও তিস্তার চরে। তাদের দাবি, বেড়িবাঁধ বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র সড়ক। কিন্তু অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বড় বড় ট্রাক্টরে চরের বালু পরিবহন করায় বাঁধটি নষ্ট হয়ে গেছে। পাশাপাশি বাঁধের নিচ থেকে বালু উত্তোলন করায় ভাঙ্গনের ঝুঁকি বেড়েছে কয়েকগুণ।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা (প্রিন্স) বলেন, ‘দুর্যোগের সময় কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিলে তা মোকাবিলায় জিও ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available