সাজ্জাদ হোসেন শিমুল, কুমিল্লা: মানব জীবনে কর্মময় ব্যস্ততার মাঝে একটু প্রশান্তি পেতে এই বর্ষায় ডালপা বিলের সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে সবাইকে। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ও ভ্রমণ পিপাসুদের বিচরণে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন আন্দিকোট ইউনিয়নের ডালপা বিল।
বিশাল আয়তনের এই বিলটি হাওরের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আষাঢ়, শ্রাবণ, ও ভাদ্র এই তিন মাস বিলে কানায় কানায় পূর্ণ পানি থাকে। বিলের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সবুজ ঘাসে সমৃদ্ধ কয়েকটি চিকন রাস্তা। মিঠাপানি আর সবুজে সমৃদ্ধ এ বিলটি দেখতে ছবির মতোই সুন্দর।
এলোমেলো বাতাসে বিলের তীরে ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ে। পানিতে মেঘে ও পাখিদের উড়ে যাওয়ার প্রতিচ্ছবি আর সন্ধ্যার গোধূলির আলোর সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে ওঠে। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এই বিলটি নিকলী হাওর কিংবা টাঙ্গুয়ার হাওরের থেকে সৌন্দর্যে কোনো অংশে কমতি নেই।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ এই বিলটি এখন বর্ষায় পূর্ণ যৌবনে রূপের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের ডাকছে শীতল পরশ দিতে। চারদিকে পানি থই থই করছে, বাতাসের সাথে ঢেউ আর বাতাসের শো শো শব্দে এ যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি। তাই প্রতিদিনই বিলের মাঝে হাওরের এমন সৌন্দর্য সুখ খুঁজতে আসেন হাজার হাজার দর্শনার্থী।
জানা যায়, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের বিশাল একটি অংশ এবং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মকিমপুর এলাকার কিছু অংশ নিয়ে মাঝখানে রয়েছে বিশাল আয়তনের এই ডালপা বিল। এই বিলের সকল জমি ব্যক্তিমালিকানা হলেও একটি সমিতির মাধ্যমে মাছ ও ফসলের চাষাবাদ হয়। শুষ্ক মৌসুমে এই বিলে থাকে সবুজ ফসলের সমারোহ আর বর্ষাকালে মাছ চাষ।
প্রতিদিনই ডালপা বিলে বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়। দর্শনার্থীদের আগমনকে কেন্দ্র করে বিলের মাঝখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে এখানে রয়েছে নৌকায় চড়ে আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা। দোকান আর নৌকা চালিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বহু মানুষের।
ডালপা বিলে ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থী বলেন, কুমিল্লা জেলায় এমন বিল আর নেই। বিকেলে সময় কাটানোর জন্য অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ এটি। নয়নাভিরাম এই সৌন্দর্য আমাদের শরীর ও মনকে প্রশান্তি দেয়। এখনকার সময়ে এমন বিল ও গ্রাম বাংলার সৌন্দর্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ
নেওয়া হলে এ বিলকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।
স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য সাদ্দাম হোসেন ব্যাপারী জানান, ডালপা গ্রামের বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা সম্মিলিত ভাবে বিলে আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও ভ্রমণপিপাসুদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে থাকেন।
বিল পল্লি মঙ্গল সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে। দর্শনার্থীদের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাবেক সভাপতি স্বপন মিয়া বলেন, দর্শনার্থীদের বিনোদনের পাশাপাশি খাবারের বিষয়টি চিন্তা করে কিছু দোকানপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সমিতির পক্ষ থেকে কিছুদিনের মধ্যে এই বিলে আসা পর্যটকদের ভোজন বিলাশের জন্য বিলের পানিতে ভাসমান রেস্টুরেন্ট করবো। যেখানে থাকবে বাংলা ও চাইনিজ খাবারের সমাহার।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন বলেন, অতি শীঘ্রই ‘উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদ থেকে ডালপা বিলে পর্যটনের সুবিধা উন্নয়ন করার জন্য মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available