বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১১ নভেম্বর সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের উন্মুক্ত মঞ্চে নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখরের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, সোমালিয়ার মোগাদিসুতে অবস্থিত দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আসিফ এস মিজান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, আজকের নবীনদের ঘিরে বাবা-মা, প্রতিবেশী, আত্মীয়- স্বজন অনেকের অনেক স্বপ্ন, সর্বোপরি দেশের স্বপ্ন। এসব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার একমাত্র পথ একজন সফল মানুষ হওয়া। এর অর্থ সিজিপিএ ৪ এ ৪ পাওয়া নয়। সেটা একটা ভিন্ন প্রেক্ষাপট। কারণ বাংলাদেশে এমন সফল মানুষ আছে যারা আদৌ পড়াশোনা করেনি। তাই সফলতা হচ্ছে একটি লক্ষ্যমাত্রা এবং একটি শৃঙ্খল জীবনই পারে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে। নবীনরা যাবতীয় নেতিবাচক ধারণা দূরে ঠেলে ভালোটুকু গ্রহণ করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। তোমরা রাজনৈতিক দলের দাসত্ব স্বীকার করবা না। স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। যেকোনো শিক্ষার্থী এই পাঁচটা বছর সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আর ঘুরে তাকাতে হবে না। তাই তোমাদের সময়ের সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য সমস্যায় নিমজ্জিত রয়েছে। তবে টানেলের শেষে আমি আলো দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, প্রশাসনিক পুনর্গঠন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, গবেষণাখাতে উন্নয়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কোন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ছাত্র সংগঠনগুলোকে আরও বেশি সক্রিয় করা এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান বলেন, নবীনদের ওপর সমাজ সভ্যতা নির্ভর করে। তাই আমাদের মানুষের মত মানুষ হতে হবে। কেননা কাগজের সনদে কখনো ভালো মানুষ হওয়া যায় না। আমাদের পাশবিক প্রবৃত্তি দূর করে ঐশ্বরিক প্রবৃত্তি নিয়ে জীবন গড়তে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, আজকে যে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করা হলো, ভবিষ্যতে তারাই ফুল হয়ে ফুটবে। তোমাদের এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে বড় হতে হবে। কারণ তোমরা দীর্ঘ ১২ বছর স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় এসেছো। আর এটি একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ যেখানে জ্ঞান সৃজন, সংরক্ষণ ও বিতরণ। সেখানে আমরা জ্ঞানের এমন পর্যায়ে আছি, যখন জ্ঞান সৃজন করতেও প্রযুক্তি লাগবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্ঞান সৃজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, নবীন শিক্ষার্থীরা আজ এমন একটি জগতে প্রবেশ করেছো, যেখান থেকে তোমাদের বিশ্বব্যাপী বিস্তৃতি ঘটবে। তোমাদের যোগাযোগ হবে বিশ্বের সাথে। মনে রাখবে, এই ৫ বছর তোমরা যেভাবে কাটাবে, বাকি জীবনে তার প্রভাব থাকবে। তাই তোমাদের জন্য আমার পরামর্শ পড়, পড় আর পড়। তোমাদের সংযোগ থাকবে শিক্ষক, ক্লাস এবং লাইব্রেরি কেন্দ্রিক। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের চেয়ে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেমন নেই, তেমনই শিক্ষকদের আলোচনা-পরামর্শেই অনেক প্রশ্নের দ্বার উন্মোচন হবে। এ সময় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ ও আহতদের সুস্থতা কামনা করে সোমালিয়ার দারুল সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
ড. শেখ আসিফ এস মিজান বলেন, আধমরা একটা জাতিকে আপনারা শিক্ষার্থীরাই বাঁচিয়েছেন। সুতরাং ভবিষ্যতেও জাতি গঠনে আপনাদের লড়াই করতে হবে। কিন্তু বুকে যদি সাহস না থাকে, যদি ন্যায়ের পথের পথিক না হন, যদি নৈতিকতা বিবর্জিত জীবন যাপন করেন, আপনি অনেক জ্ঞানী হলেও তা কোনো কাজে আসবে না। সর্বোপরি সফলতার আধুনিক অস্ত্র হলো যোগাযোগ। তাই প্রত্যেকের চারপাশের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ থাকা জরুরি। দিনশেষে তোমাকে এমন কিছু করতে হবে, যা তোমাকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা বলে প্রমাণ করবে। তবেই তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে।
পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বলেন, মনে রাখবা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতার চাবিকাঠি হলো ৯৫ ভাগ পরিশ্রম আর মাত্র ৫ ভাগ মেধা। বৈশ্বিক শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের নষ্ট করার মত সময় হাতে নেই।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোনো শিক্ষার্থী যদি ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়াশোনা করে, তার অর্জিত জ্ঞান অবশ্যই একাডেমিক কিংবা পলিসি মেকিংয়ে কাজে লাগবে। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শিক্ষার তিনটি পর্যায় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। আর তা হলো ইনফরমেশন, নলেজ এবং উইজডম।
বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সানজিদা হক মিশু ও ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মো. ময়নুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান, আইন অনুষদের ডিন ড. মো. রাজিউর রহমান, প্রক্টর ড. মো. কামরুজ্জামান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আবু সালেহ প্রমুখ।
এর আগে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে অতিথিদের নিয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available