মাসুদার মাসুদ, গাইবান্ধা: গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা বিআরডিবি অফিস থেকে মাত্র দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে নকশিকাঁথায় স্বপ্ন বুনে সফল হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা শেফালী বেগম। নিজে সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান করেছেন সমাজের পিছিয়েপড়া শতাধিক নারীর। তার হাতে সেলাই করা নকশিকাঁথা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এখন যাচ্ছে জর্ডানেও।
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী পৌরসভার উদয়সাগর মুন্সিপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী শেফালী। স্বামীর রোজগারে টাকা দিয়ে শেফালীর সংসার চলত না। ১৯৯০ সালে সপ্তম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় রেজাউলের সঙ্গে বিবাহ হয় পাশের গ্রাম আমবাড়ীর মেয়ে শেফালীর। অভাব অনটনের সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হতো।
ছোট বেলা থেকেই শেফালীর সেলাই-ফোঁরাইয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল। সংসারের এমন পরিস্থিতিতে শেফালী ২০০৮ সালে পলাশবাড়ী বিআরডিবি অফিস থেকে নকশিকাঁথা ও এমব্রয়ডারি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সে বছরই বিআরডিবি অফিস থেকে তাকে দেড় লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয় তাকে। ঋণের টাকা নিয়ে প্রথমে গ্রামের ১৫ থেকে ২০ জন
নারী নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই শুরু করলেও বর্তমানে শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে তার উদ্যোগের মাধ্যমে। তাদের সেলাই করা নকশিকাঁথা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে, সম্প্রতি দেশের সীমান পেরিয়ে বাইরেও যাচ্ছে তার তৈরি নকশিকাঁথা।
এক সময় তার তৈরি নকশিঁকাথা বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হলেও এখন আড়ং, কারুপণ্যসহ ঢাকা, বগুড়া, রংপুরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি জর্ডানেও যাচ্ছে এই কাঁথা। আর এর সুবাদেই দু'ছেলেকে করেছেন উচ্চ শিক্ষিত। মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। স্বামীকে মটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। এসব করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করছেন শেফালী বেগম।
পলাশবাড়ী উপজেলা পল্লী উন্নয়ন র্কমকর্তা হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, শেফালী বেগম আমাদের এখান থেকেই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা। তাদের কাজের যে মান তা দেশের অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠানের চাইতেও ভালো। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই নারী উদ্যোক্তা শেফালী বেগমকে ঋণ প্রদান করেছি এবং যে কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে, সেটাও করা হবে।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহম্মাদ কামরুল হাসান বলেন, গ্রামের গৃহবধূ, বিধবা নারী, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা ও শিক্ষার্থীসহ সমাজে পিছিয়েপড়া নারীদের নিয়ে গড়ে তোলা এই ক্ষুদ্র প্রষ্ঠিানটি আগামী দিনে হাজারো নারীর কর্মসংস্থান হবে, তাদের তৈরি পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করবে, সেই সাথে দেশের সুনাম বয়ে আনতে সক্ষম হবে, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available