খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে অনাবদী জমিতে বস্তায় আদাচাষ করে সাফল্য পেয়েছেন নাজমা সুলতানা নামে এক নারী কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলার পূর্ব তিনটহরী এলাকায় তিন একরের একটি পারিবারিক মিশ্র ফল বাগানে কলা ও মাল্টা চাষের সাথী ফসল হিসেবে প্রায় ৫ হাজার ৩০ বস্তায় আদার আবাদ করেন তিনি। ইতোমধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে সাড়া ফেলেছে অন্য কৃষকদের মাঝেও। প্রচলিত চাষের বিকল্প হিসেবে বস্তায় চাষে মাটি ক্ষয় ও পোকা মাকড় আক্রমণের ঝুঁকিও কম। এতে ফলন বেশ ভালো হয়।
ফোর সিজন এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী নাজমা সুলতানা বলেন, এটা আমাদের পারিবারিক বাগান। এখানে মাল্টা, কলা, সজনে ও নিম গাছ লাগিয়েছি। এরপরেও প্রচুর ছায়াযুক্ত জায়গা পরে আছে। সাথী ফসল হিসেবে কিছু একটা চাষাবাদের পরিকল্পনা ছিল।
তিনি বলেন, ফোর সিজন এগ্রো ফার্মের কাজ পরিচালনা ও রক্ষণাবক্ষেণের জন্য দুজন স্টাফ রয়েছে। প্রতি মাসে তাদের বেতন ভাতা বাবদ ২৫ হাজার টাকা। বছরে ৩ লক্ষ টাকা। ফার্মের আয় থেকে তাদের বেতন ভাতা পরিশোধের উপায় খুঁজছিলাম। একদিন বস্তায় আদা চাষ বিষয়ে ইউটিউবে একটি প্রতিবেদন দেখে এবং বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর মো. আশিকুল ইসলামের বস্তায় আদা চাষ বিষয়ে বক্তব্য শুনে আমি অনুপ্রাণিত হই। গত বছরের মে মাসে বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছি। ফেব্রুয়ারিতে আদা সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটা বস্তায় আদা তুলে দেখেছি ফলন খুবই ভালো। অন্তত ১০ টন আদা উৎপাদিত হবে। যা বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকার বেশি বলে আশা করছি।
এদিকে, বাগান পরিচর্যা ও দেখা শোনার কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে স্থানীয়দের। বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত আছমা খাতুন বলেন, আমি এ বাগানে পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত। প্রতিদিন মালিক আমাকে ৩৫০ টাকা দেয়। এখান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে আমার সংসার চলে।
বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত পাইমং মারমা বলেন, আমি লেখা পড়ার পাশাপাশি ফোর সিজন এগ্রো ফার্মে কাজ করে আসছি। কীভাবে বস্তায় আদা চাষ করতে হয়, তা আমি শিখেতেছি। এ বাগানে প্রথম বারের মত প্রায় ৫ হাজার ৩ শত বস্তায় আদা করা হয়েছে। আপাতত আদা চাষের ফলন ভালো দেখছি। ইতোমধ্যে বস্তায় আদা চাষের পদ্ধতি দেখে আমি আমার বাসার আঙ্গিনায় চাষ করেছি। আশা করছি ফলন ভালো হবে।
মানিকছড়ি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার নাথ বলেন, এখানে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে বস্তায় আদা চাষ করেছে। যখনি রোগ বা পোকা মাকড়ে আক্রান্ত হয়, তখনই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়। এখন এলাকার অনেক কৃষক বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। বস্তায় আদা চাষ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পরবে।
মাটিতে মসলা জাতীয় আদা চাষ করলে ভূমি ক্ষয় ও নানা ধরণের রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি থাকে। জমিতে আদা চাষে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি কন্দপঁচা রোগ। টানা ১০ থেকে ১৫ দিন বৃষ্টি হলে এই রোগের সংক্রমণ হয়। কিন্ত বস্তায় আদা চাষে সেই ঝুঁকি নেই। যতই বৃষ্টি হোক বস্তায় পানি বেশিক্ষণ জমে থাকে না। আর যেহেতু প্রতিটি বস্তা আলাদা আলাদা তাই কন্দপঁচা রোগ সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই।
মানিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২৭০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হচ্ছে। এখন পাহাড়ের ঢালু অংশ যেভাবে আদা চাষ হচ্ছে, তাতে ভূমি ক্ষয়ের শঙ্কা রয়েছে। ভূমি ক্ষয় রোধে পরিবেশ সম্মত উপায়ে বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। উপজেলার ৪ হাজার ২৬৮ হেক্টর ফল বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আদা চাষ করা যাবে। আদা চাষ সাধারণত ছায়াযুক্ত স্থানে চাষাবাদ ভালো হয়। এতে বাড়তি আয় হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বাৎসরিক আদার চাহিদা ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দুই থেকে আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আদা উৎপাদিত হয়। বাকি আদা বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। বস্তায় আদা চাষ বাড়লে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের আমদানি বাবদ অর্থ সাশ্রয় হবে।
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়িতে ২০২৩ সালে আদা চাষ হয়েছে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৪ হাজার ৬০২ মেট্টিক টন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available