পঞ্চগড় প্রতিনিধি: গ্রামের এক দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। ১০ মার্চ রোববার নেপালের কাঠমান্ডুতে ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আর এই অর্জনে মূল ভূমিকা পালন করে গোলরক্ষক ইয়ারজান। তার এই বীরত্বেই গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ে বইছে উৎসব। দিন রাত জুড়েই চলছে মানুষের ভীড়।
১২ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম ইয়ারজানের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় উপহার হিসেবে নগদ টাকাও তুলে দেন তাদের হাতে। আশ্বাস দেন ঘর করে দেওয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন, ইয়ারজানের দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দীন, ক্রীড়া সংগঠক এটিএম আখতারুজ্জামান ডাবলু, ইউপি সদস্য জুলহাস উদ্দীন প্রমুখ।
ইয়ারজান পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। আনন্দিত পরিবার এবং প্রতিবেশিরাও। টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপারের ট্রফিটাও নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তার এই সাফল্যে গ্রামের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করেছে এলাকাবাসী আর তার দাদী এসব মানুষকে আনন্দে খাওয়াচ্ছেন পান সুপারি।
জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত গ্রামে ইয়ারজানদের বাড়ি। সড়কের পাশেই ছোট ছোট দুইটি ঘর তাদের। এরমধ্যে একটি ঘর একেবারেই জরাজীর্ণ। একপাশে ছাউনির টিনগুলো খুলে গেছে। সেই ঘরের শোকেসে সাজানো আছে ইয়ারজানের সাফল্যের ক্রেস্ট এবং ট্রফি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। ফলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা রেনু বেগম। মায়ের উপার্জনেই চলে তাদের সংসার। সম্পদ বলতে তাদের কেবল ভিটেমাটি।
কথা হয় মা রেনু বেগমের সঙ্গে। তিনি এশিয়ান টিভিকে জানান, মানুষের ফসলি জমিতে কাজ করে মেয়েকে বড় করেছি। খুব কষ্ট করে আমার মেয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। অভাবের সংসারে মেয়েকে তিনবেলা ঠিকমতো খাওয়াতে পারিনি। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে, আমাদের গর্বিত করেছে। মানুষ অনেক কথা বলেছে। এক সময় তাকে আটকানোর চেষ্টা করেছি তবুও নিজের মত করে এগিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম ২০ টাকা হাজিরায় শুরু করে এখন দৈনিক ২৫০ টাকা মজুরি পাই। এ দিয়েই অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা খরচ এবং সংসার চালাই। অনেক সময়ে মেয়েকে অনুশীলনে যাওয়ার যাতায়াত ভাড়া দিতে পারতাম না। কিছু কিনে খাবে এজন্য অতিরিক্ত টাকা কখনই দিতে পারিনি। আজকে এসব আর কষ্ট মনে হয় না, গর্বে বুক ভরে গেছে আমার।
ইয়ারজানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ মেয়ের। তবে আমরা কখনও উৎসাহ দেইনি, মানুষও ভালো বলতোনা। তাছাড়া অনুশীলনে পাঠানোর মত পয়সাও ছিল না। কিন্তু মেয়ে এসবে তোয়াক্কা করতো না তাই সংসারে টানাপোড়ন উপেক্ষা করেই তাকে যেতে দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি অবদান তার মায়ের। টুকু ফুটবল একাডেমিও অনেক সহযোগিতা করেছে তাকে। এখন আমার মেয়ে সেরা গোলরক্ষক। ইয়ারজানের এমন গর্বে গর্বিত স্থানীয়রা।
পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমির কোচ টুকু রেহমান এশিয়ান টিভিকে জানান, আমার একাডেমির খেলোয়াড়ের এমন সাফল্য আমাদের নাম উজ্জ্বল করছে। প্রথম থেকেই দেখেছি তার খেলার প্রতি অনেক আগ্রাহ ছিল, তাই আস্তে আস্তে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত মাঠে দৌড়ানোকে রপ্ত করছে ইয়ারজান। দোয়া করি আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে ইয়ারজান। তিনি আরও বলেন, ইয়ারজানের মত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available