কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার সমশিরা উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়া পদে প্রার্থীর সাথে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অভিযোগ উঠেছে কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জানাজানি হলে আবেদন করতে না পেরে বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিভাবকরা স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন। গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা প্রধান শিক্ষক স্বীকার করলেও সভাপতি অস্বীকার করেন।
লিখিত অভিযোগ ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ রয়েছে আগামী ১৪ মার্চ পর্যন্ত। সভাপতি মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের এবং প্রধান শিক্ষক সোহানুর রহমান মিলে গোপনে রেজুলেশন করে ১৫ দিনের সময় দিয়ে দৈনিক আলোকিত সকাল ও দৈনিক মুক্ত সকাল পত্রিকায় গত ২৪ ডিসেম্বর আয়া পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। নিয়ম আছে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তা বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ড ও উপজেলা শিক্ষা অফিসে টাঙাতে হবে। কিন্তু তা না করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে উপজেলার বালাখুর গ্রামের লিটন রানার স্ত্রী খাদিজা সুলতানাকে চাকুরি দেওয়ার শর্তে তারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই প্রার্থীর স্বামীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেজন্য তারা গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছেন।
অগ্রণীব্যাংক লিমিটেড মাত্রাই শাখার ব্যবস্থাপক আইনুল হক বলেন, ‘লিটন রানা নামে এক ব্যক্তি গত ২ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড মাত্রাই শাখা থেকে ৫০০ টাকার ০৮ই-৫২৭৩৮৬৮ থেকে ০৮ই-৫২৭৩৮৭২ সিরিয়ালের পাঁচটি ব্যাংক ড্রাফট ক্রয় করেছেন। ব্যাংক ড্রাফটগুলো প্রধান শিক্ষক সমশিরা উচ্চবিদ্যালয়ের নামে ইস্যু করা হয়েছে এবং দাখিলকৃত আবেদনপত্রের সাথে এসব ব্যাংক ড্রাফটের মিলও পাওয়া গেছে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধিরা কিছুই জানেন না।
অভিযোগকারী রজ্জব আলী বলেন, ‘গ্রামের বিদ্যালয় হলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যাপারে কেউ জানেন না। আবেদনের সময় শেষ, তাই গ্রামের প্রার্থীরা আবেদন করতে পারেননি। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মিলে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির মাধ্যমে পাঁচজনের আবেদন করিয়েছেন। নিয়োগ দেওয়ার জন্য গোপনে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। এর আগেও নিয়োগ দিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা তারা দুজন মিলে আত্মসাৎ করেছেন। সুষ্ঠু তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।’
আবেদনকারী খাদিজার স্বামী লিটন রানা বলেন, ‘সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেই ওই পাঁচটি ব্যাংক ড্রাফট করেছি।‘ তবে কত টাকার চুক্তিতে চাকরি হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
প্রধান শিক্ষক সোহানুর রহমান বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পত্রিকা দুটি এলাকায় আসে না জানি। কমিটির রেজুলেশন করেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। ভুলবশত বোর্ডে টাঙানো হয়নি।‘ তবে প্রার্থীর নিকট থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
নিকটাত্মীয়কে চাকুরি দেওয়ার বিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুল কাদেরের কাছে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে এ বিষয়ে তার বলার কিছুই নেই বলে নিউজটি না করার অনুরোধ জানিয়ে লাইন কেটে দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনোয়ারুল হাসান বলেন, ‘বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিভাবক রজ্জব আলী ও রাশেদ খাঁন নামে দুজনের পৃথক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথাও হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। গোপনে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available