ফরিদপুর প্রতিনিধি: নানামুখী উন্নয়নে ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার দুর্গম চরে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। এ পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ আর সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন।
ফরিদপুর শহর থেকে নর্থ চ্যানেলে যেতে পাড়ি দিতে হয় পদ্মা নদী। একমাত্র বাহন নৌকা-ট্রলার। শহরের সীমানায় পশ্চিম টেপাখোলার ধলার মোড় অথবা তার পাশে সিঅ্যান্ডবি ঘাট থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে পৌঁছাতে হয় সেখানে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণের আওতায় দুর্গম এই চরে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণের দুরূহ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময় সন্ধ্যা নামলেই যে জনপদে নেমে আসতো ভূতুড়ে অন্ধকার। অন্ধকারে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌপথেও চলাচল বন্ধ হয়ে যেত, সেখানে এখন আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। সড়ক পথের উন্নয়ন আর বিদ্যুতের আলোয় পরিবর্তনের ছোঁয়ায় আলোকিত হয়ে উঠেছে এক সময়ের চরম অবহেলিত মানুষের জীবন। এখন চায়ের দোকানে রাতভর জমিয়ে চলে আড্ডা। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে যেন নতুন এক উদ্দীপনা নিয়ে ঘর হতে বেরিয়ে আসেন লোকজন।
পদ্মা নদীর বুক চিড়ে পানির তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এখানে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। নিভৃত চরের এই অজপাড়াগাঁয়ে রঙিন টেলিভিশনে ডিশ লাইনে চলে দেশ-বিদেশের নানা টিভি চ্যানেল। চরাঞ্চলের মোহন মিয়ার হাট বা শফির খেয়াঘাটের দোকানগুলোতেই শুধু নয়, সাধারণ বাসাবাড়ির টিনের ঘরেও একে স্থান করে নিয়েছে টিভি, ফ্রিজসহ নিত্য ব্যবহার্য বৈদ্যুতিক যন্ত্র।
এক সময় যারা সন্ধ্যার পরে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যেত, তারাও এখন অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন পরিবর্তিত জীবনধারার সঙ্গে। রাত জেগে ছেলে-মেয়েরা বিদ্যুতের আলোতে পড়াশোনা করে। কেউ বাসায় বসে টিভি দেখে।
সোহাগ নামে একজন টেইলারের কারিগর বলেন, বিদ্যুৎ আসার ফলে আমরা এখন কারেন্টচালিত জ্যাক মেশিন বসিয়েছি দোকানে। এতে আমাদের কষ্ট কমেছে, আয় বেড়েছে। জামাকাপড়ের ফিনিশিং ভালো হয়। ফলে কাস্টমারও সন্তুষ্ট।
খায়রুল ইসলাম মোল্লা নামে এক শ্রমিক জানান, তাকে বিভিন্ন কাজে চরের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে হয়। আগে কাঁদামাটি পেরিয়ে চলাচল করতে হতো। এখন রাস্তাঘাট হওয়ায় সেই সমস্যা নেই। এজন্য তিনি নিজেই যাতায়াতের সুবিধার জন্য একটি মোটরসাইকেল কিনে নিয়েছেন।
নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, এখন চলাচলের জন্য রাস্তা, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ হওয়ায় এলাকার দৃশ্যপট বদলে গেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যা তাদের সামাজিক নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করেছে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই এলাকায় নির্মাণ সামগ্রী ও ভারী উপকরণ পৌঁছানো অনেক দুরূহ। ধাপে ধাপে সেগুলো পৌঁছাতে হয়েছে। এছাড়া কাজগুলো বাস্তবায়নে নানা জটিলতাও ছিল। তবে, এরই মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবো বলে আশা করা হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available