নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেরি সংকটে অথবা আবহাওয়াজনিত জটিলতা, অথবা যানজটে পড়ে পদ্মা নদী পার হতে না পেরে তরমুজ বোঝাই শতাধিক গাড়ি আটকে পড়ার কাহিনী কারও অজানা নয়। শুধু তরমুজই নয়, মাদারীপুর থেকে আনা কলাই শাক, শরীয়তপুর থেকে আনা নানা ধরনের সবজি, ফরিদপুর থেকে আনা খেজুরের রস, বরিশাল ও পটুয়াখালি থেকে আনা তরমুজ, বাঙ্গি, আমড়া ও মুরগির ডিমবাহী ট্রাকও পদ্মার পাড়ে আটকে থাকত, ঘণ্টা পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ফলে এসব পচনশীল পণ্য গরমে নষ্ট হয়ে যেতো। যা ফেলে দিতে বাধ্য হতেন ব্যবসায়ীরা। আবার কেউ কেউ এসব পণ্য কম দামে বিক্রি করে দিয়ে লোকসানের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বাড়ি ফিরতেন খালি হাতে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এমন পরিস্থিতির অবসান হয়েছে বলে স্বস্তিতে পদ্মার পাড়ের কৃষিজীবী মানুষের। ২১ জেলার কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। বাড়ছে চাষাবাদ। বাড়ছে কৃষিনির্ভর খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন। জমির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হচ্ছে সেসব কৃষিপণ্যের চাষাবাদ। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত সহজ হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ক্রেতাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি। চুক্তি ভঙ্গ হওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনে সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এনেছে পদ্মা সেতু। মাত্র এক বছরেই পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের শুধু যোগাযোগের সুবিধাই নয়, গোটা দেশের অর্থনীতি-সহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। সেতু পার হতে এখন সময় লাগে মাত্র ৬ থেকে ৭ মিনিট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৈত্রিক নিবাস রাজধানী ঢাকা থেকে দেড়শ’ কিলোমিটার দূরে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। তিনি নিজেই এখন হেলিকপ্টার ছেড়ে কারে, গাড়িতে চেপে বাড়ি যান। পদ্মাপাড়ে গিয়ে জলখাবার খান।
এই পদ্মা সেতুতে রেললাইন জুড়ে যাওয়ায় এরইমধ্যে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙা থানা পর্যন্ত রেল চলাচল দ্রুতই শুরু হচ্ছে। এই রেললাইন সংযুক্ত হবে যশোর পর্যন্ত। এর ফলে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা-কলকাতা ৫০০ কিলোমিটারের পরিবর্তে দূরত্ব দাঁড়াবে আড়াইশ’ কিলোমিটার। রেলে চড়ে কলকাতা পৌঁছানো যাবে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই। ভোগান্তি দূর হবে রোগী-সহ পড়ুয়াদের।
আগে পদ্মা নদী পার হতে সময় লাগতো দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। এখন রাজধানী ঢাকা থেকে মানুষ বাসে করে বেনাপোল-পেট্রাপোল পৌঁছায় সাড়ে চার ঘণ্টায়। আগে এই সময় লাগত ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা। আর আবহাওয়া খারাপ থাকলে তো কথাই নেই। ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। এখন পদ্মা সেতুর জন্য কৃষক যেমন তাঁর ফসল দ্রুততার সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় পাঠিয়ে কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন, অপরদিকে মানুষ দ্রুততার সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন।
গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়। ২৬ জুন থেকে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আগের মতো আর ফেরিঘাটে ৪/৫ ঘণ্টা অসহনীয় ভোগান্তি নেই। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু। এখন খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছেন। গত এক বছরে ম্যাজিকের মতো বেড়েছে এই জনপদের জমির দাম। উন্নত হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। সেতুর দুই পাড়ের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-পর্যটন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের বিকাশ ঘটেছে। পদ্মার এপার ও ওপারের কৃষি ও শিল্পপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা দ্রুত হচ্ছে। সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব।
গত এক বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় হয়েছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার বেশি। সেতু বিভাগ জানায়, ২০২২ সালের ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া পদ্মা সেতুতে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে ৫৬ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৪৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে। ওইসব গাড়ির টোল থেকে আয় হয়েছে ৭৯০ কোটি ৯৪ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। আয় থেকে ৬২২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available