সিলেট ব্যুরো: কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে শুক্রবার ও শনিবার বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে সিলেট জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার কৃষকরা। বোরো মৌসুমে আবাদ করা ক্ষেতের মধ্যে পানি চলে আসায় তারা ক্ষতির সম্মুখীন বলে জানিয়েছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে- সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, লুবাছড়া, পিয়ান নদীর প্রতিটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে অবস্থান করছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, আগামী ৪৮ ও ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি ও কোথাও কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
জৈন্তাপুর বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের মৌসুমে বোরো ধান আবাদে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে রাসায়নিক বিভিন্ন সার, পানি সেচ, চারা লাগানো, ধান কাটার খরচ রয়েছে।
ডিবিরহাওরের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এবার ২ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। এ বছর ইতোমধ্যেই ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যেই আমার ক্ষেতের জমিতে পানি চলে এসেছে। সময় মতো ধান কাটতে না পারায় এ বছর খরচের টাকাও উঠবে না।
বিরাইমারা হাওরের কৃষক মোস্তফা মিয়া বলেন, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমার ক্ষেতের জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ বছর ভালোই ধান হয়েছিলো কিন্তু আগাম পানির চলে আসার কারণে ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে আসতে পারি নাই।
খারুবিলের কৃষক আহমেদ আলী বলেন, এতো কষ্ট করে ধান আবাদ করলাম। ইতোমধ্যেই আমার খরচ ৮ হাজার টাকা। এবারের খরচের টাকা তুলতে পারব কিনা জানি না। এরমধ্যে পানি চলে আসার ক্ষেতের ধান পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ঘিলাতৈল এলাকার কৃষক মঞ্জুর মিয়া বলেন, এবার মোট ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেছি। ফলন ও ভালো হয়েছে, কিন্তু অসময়ে পানি চলে আসায় ঘরে ধান তুলতে পারিনি। এতে করে ক্ষতির সম্মুখীন হব।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, পাহাড়ি ঢলের সাথে টানা বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিলো। তবে উপজেলার প্রায় ৯৮ শতাংশ ফসল কাটা শেষ হয়েছে। ফলে ফসল ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো শঙ্কা নেই।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, বৃষ্টি পাহাড়ি ঢলের কারণে নদ-নদীতে শনিবার নতুন করে পানি বাড়েনি। প্রায় সকল পয়েন্টে পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। বৃষ্টি না হলে পানি সমতল আরো হ্রাস পাবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, নিম্নাঞ্চল এলাকার ধান কেটে নেওয়ার জন্য কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available