রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: নিজেদের খেয়াল খুশি মতো মাসে দুই একদিন বিদ্যালয়ে যান শিক্ষক-শিক্ষিকা, তাদের পরিবর্তে ক্লাস নেন প্রক্সি শিক্ষক। সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
‘আমাগো গরিব এলাকা লেখাপড়া হলে, পড়াশোনার পরিবেশ করতে পারলে শত শত মানুষ আপনাগোর জন্য দোয়া করব। শিক্ষকরা দশ বারো দিন অন্তর একদিন আইয়া ঘুম পাইরা জায়গা।’ কথাগুলো আক্ষেপ করে বলছিলেন স্কুল কমিটির অভিভাবক সদস্য দাবি করা মোগল হোসেন। এসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক মাইনুল ইসলাম ও শিক্ষিকা ফারজানা আফরিন রুনার বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসীর একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক শাহাবুর রহমান মিয়া ছাড়া আর কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত নেই। পাশেই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ চলমান, পুরাতন দুটি একতলা ভবনের একটির ভবন জুড়ে মেঝেতে পড়ে রয়েছে গাদি গাদি বই পত্র, টিন, ময়লা আবর্জনা, নেই কোনো চেয়ার-টেবিল। বিদ্যালয়টিকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যে অতি নগণ্য সেটা চারপাশের পরিবেশ দেখলেই বোঝা যায়। পাশের ভবনটিতে কয়েকটি বেঞ্চ, সেখানে ক্লাস নিচ্ছেন প্রক্সি শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন।
সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি (প্রাক) ছোট বাচ্চাদের ক্লাস নেই। আমি অন্যান্য ক্লাস নেই, পঞ্চম শ্রেণিরও নেই।’
মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘আমি শিক্ষিকা ফারজানার পরিবর্তে এই স্কুলে গত চার মাস ক্লাস নিয়েছি।’
এলাকাবাসী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জহুরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, সাইফুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সহকারী শিক্ষক মাইনুল ইসলাম ও মোসাম্মৎ ফারজানা আফরিন রুনা স্কুলে নিয়মিত না। এর আগে বিদ্যালয়টিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন সহকারী শিক্ষক মাইনুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ এনে তারা বলেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে কে কে আছে আমরা জানি না, এই দুই বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাইনুল ইসলাম ম্যানেজিং কমিটি ছাড়া যে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে তার শাস্তি হওয়া দরকার।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল মজিদ জানান, ‘এক বছরের বেশি হলো আমি কোনো কাগজপত্রে সিগনেচার দেই না। কীভাবে শিক্ষকেরা বিল তুলছে আল্লাহই জানেন, আর প্রধান শিক্ষক জানেন।’
মোবাইল ফোনে কথা হলে শিক্ষক মাইনুল ইসলাম ও মোসাম্মৎ ফারজানা আফরিন রুনা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চর ইটালুকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাবুর রহমান মিয়া জানান, তিনিসহ বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিনজন শিক্ষক আছেন। তিনি ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর এ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাকে একাধিকবার নিয়মিত ক্লাসে আসার জন্য বলেছেন। তিনি আরও জানান, দুই মাসের মধ্যে স্কুলের পরিবেশসহ সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলবেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ জানান, নিউজ না করাই ভালো, এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সব ঠিক করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। সেই সাথে তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়টিতে তিনজন নয় চার জন শিক্ষক কর্মরত আছেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব অনিয়ম থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available