নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি: ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধা আয়মন নেছা(৭৫)। জীবনের শেষ বেলায় একটু আরামে ঘুমানোর জন্য একটি ঘর চান তিনি। এই প্রতিবেদককে কাছে পেয়ে বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাকে দেখার কেউ নাই, আমারে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দেবেন? একখানা ঘরের ব্যবস্থা করি দিলে আল্লাহ তোমারে ভাল করবে।’
শেরপুরের নকলা উপজেলার ৭নং টালকি ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামে জরাজীর্ণ বসতঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই অসহায় বৃদ্ধা মা । ভাঙা ঝুপড়ি ঘর, একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে বিছানা ভিজে যায়। ভেজা বিছানাতেই ঘুমান তিনি। বৃষ্টির পানি পড়ে ঝুপড়ি ঘরে মেঝে কাঁদা, ভিতরে লাকড়ি, রান্নার চুলা সব বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে । ভেজা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বিভিন্ন পোকা মাকড় বাসা বেঁধেছে।
আয়মন নেছা জানান, ‘আকাশে মেঘ দেখলেই মন আঁতকে ওঠে। বৃষ্টিতে ঝুপড়ি ঘরটি যেকোন মুহূর্তে পড়ে যেতে পারে!’
এলাকাবাসীর মতে, আয়মন নেছার স্বামী কছিমদ্দিন মারা যাবার পর স্বামীর ভিটায় আর জায়গা হয়নি। এক সময় বিভিন্ন মানুষের রান্নাঘর কিংবা স্কুলের বারান্দায় থেকেছেন।
বর্তমানে ফুলপুর গ্রামের জনৈক নুরে আলমের বাড়ির সামনে পতিত জমিতে ঝুপড়ি ঘরে থাকেন।
বৃদ্ধা আয়মন নেছা সরকারি কোনো ভাতা পান না, এমনকি রেশনকার্ড পর্যন্ত পাননি। সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সরকার ভিক্ষুকদের তালিকা চেয়েছিল, সেখানেও কোনো মেম্বার অথবা চেয়ারম্যান আয়মন নেছার নাম দেননি।
আয়মন নেছার ঝুপড়ি ঘর থেকে ৫০ গজ দূরে ১নং ওয়ার্ড ফুলপুর গ্রামে ফরিদুল মেম্বারের বাড়ি। ফরিদুল মেম্বার জানান, আয়মন নেছা তার ভোটার আইডি কার্ড আমাকে দেয়নি। তাই তার নামে কোনো ভাতা কার্ড করে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
আয়মন নেছা বলেন, মেম্বার ফরিদুল আমাকে বিধবা ভাতা করে দিবে বলে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে গেছে। কিন্তু বিধবা ভাতা কার্ড করে দেয় নাই। এমনকি আইডি কার্ডও ফেরত দেয় না।
টালকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদ বলেন, এত অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে, এই বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি দ্রুত রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করবো।
নকলা সমাজসেবা অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেলেও ভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন না। এখন তো অনলাইন থেকে সকল তথ্য পাওয়া যায়। অসহায় আয়মন নেছা সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত আপনার কাছ থেকে প্রথম জানতে পারলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি নিজ দায়িত্বে এই আয়মন নেছার বয়স্ক অথবা বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করবো।
ফুলপুর মধ্যপাড়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন সুলতান আহাম্মেদ বলেন, হতদরিদ্র আয়মন নেছাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটা বাড়ি দেওয়া উচিত ছিল। ময়লা যুক্ত পানিতে বৃদ্ধা আয়মন নেছার চলাফেরা করাতে পায়ে ঘা দেখা দিচ্ছে। বিছানায় পড়ে গেলে কে দেখবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available