ডাসার (মাদারীপুর) প্রতিনিধি: মাদারীপুরের ডাসারের তিন যুবক পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলার ডুবিতে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে । তাদের ইউরোপে পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করার প্রলোভন দেখান স্থানীয় দালাল। সেই ফাঁদে পা দিয়ে শেষ সম্বল জমি ও ধার দেনা করে ১৫ লাখ করে টাকা জোগাড় করেন তারা।
উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরহাদ মোল্লার হাতে ১৫ লক্ষ টাকা তুলে দিয়ে অবৈধ পথে যান লিবিয়া। এর পর কেটে যায় চার মাস। এতদিন তারা পরিবারে কোনো টাকা-পয়সা না পাঠালেও স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। তবে প্রায় তিন মাস আগে সেই যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্বজনের খোঁজ নিতে বার বার দালালের বাড়ি যান স্বজনরা। অবশেষে এলো তাদের মৃত্যুর সংবাদ।
নিখোঁজ তিন যুবক ডাসার উপজেলার গোপালপুরের পূর্ব পুবালি গ্রামের হোটেল ব্যবসায়ী মিলন, মুরগি ব্যবসায়ী আল-আমিন ও শান্ত খান। ইউরোপে নেওয়ার কথা বলে তাদের ফুসলিয়ে লিবিয়া পাঠানো হয় বলে দাবি করেছে পরিবার।
স্বজনরা বলেন, তিন মাস ধরে মিলন, আল-আমিন ও শান্তর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাদের বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদের কাছে গেলে তিনি টালবাহানা করেন এবং বলেন তারা অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ইতালি পৌঁছে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। অবশেষে এলো মৃত্যুর খবর।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে পূর্ব পুবালি গ্রামের অপর যুবক ইস্রাফিল লিবিয়া থেকে ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওই দেশ থেকে ট্রলারে করে ইতালি যাওয়ার পথে পানিতে ডুবে মারা গেছেন মিলন, আল-আমিন ও শান্ত। তবে ভাগ্যক্রমে লিবিয়া পুলিশের কাছে আটক হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। কিছুদিন জেল খেটে দেশটির কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর তাঁকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, তাদের ফুসলিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর খবরে মিলন, আল-আমীন ও শান্তর পরিবারসহ এলাকায় চলছে শোকের মাতম।
এতদিন নিখোঁজ থাকলেও তাদের ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন স্বজন। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সেই আশা শেষ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানার জন্য আবারও ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদের কাছে গেলে তিনি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। এর পর তাদের বিষয়ে প্রকৃত তথ্য জানাবেন।
নিখোঁজ মিলন ও আল-আমিনের মা জানান, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জমি জমা বিক্রি ও ধারদেনা করে লিবিয়া গিয়েও ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না।
নিখোঁজ শান্তর মা বলেন, আমার ছেলেকে দিতে চাইনি, চেয়ারম্যান ফুসলিয়ে তাকে ইতালি নেওয়ার জন্য লিবিয়া পাঠিয়েছেন। ফরহাদ ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় এ জনপ্রতিনিধির ওপর বিশ্বাস ছিল। তাই অনেক কষ্টে ১৫ লাখ টাকা জোগাড় করে দিয়েছি। এখন শুনছি, শান্ত পানিতে ডুবে মারা গেছে।
নিখোঁজ তিন যুবকের বিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদের সাথে যোগাযোগের জন্য তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোন নাম্বার ও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তাদের ফুসলিয়ে লিবিয়া পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন তাঁর স্ত্রী।
ডাসার থানার ওসি শফিকুর রহমান বলেন, তিন যুবককে ফুসলিয়ে লিবিয়া পাঠানো ও তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি। মামলা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available