গবি প্রতিনিধি: সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের মধ্যে অন্তত দুই দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ফুটবল টুর্নামেন্ট স্থগিত করেছে গবি প্রশাসন।
১১ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে প্রথমে আইন ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি (বিএমবি) এবং পরে বিকেলে আইন এবং রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আইন বনাম বিএমবি বিভাগের মধ্যকার ফুটবল খেলা চলাকালীন প্রথমার্ধের পরে কথা-কাটাকাটির জের ধরে মারামারির সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় বিএমবি বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায় এবং দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ক্রীড়া কমিটি উক্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনা শিথিল হওয়ার ১ ঘণ্টা না পেরোতেই দ্বিতীয় দফায় রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, প্রথম ঘটনার পর বিএমবি বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করলেও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠেই অবস্থান নেয়। পরবর্তী ম্যাচ রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সাথে মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। খেলোয়াড়রা মাঠে এসে মাঠ ছেড়ে দিতে বললে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় তর্কাতর্কির জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রিদয় বলেন, ' বিএমবির খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগের পরও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠে ফুটবল খেলছিলো। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী গোলবারের পাশে বসে ছিলো। বল থেকে গায়ে পানি ছিটে আসলে আইনের খেলোয়াড়দের ধীরে খেলতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তর্ক শুরু করে। তর্কের এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মারধর শুরু করে।'
দ্বিতীয় দফায় মারামারির ঘটনায় দুই বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহত শিক্ষার্থীদের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা: সোহাগ রানা বলেন, 'এখনো পর্যন্ত ২৫/৩০ জনের মত চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের ফ্রেকচার ধরা পড়েছে। এক জনের মাথায় সেলাই লেগেছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'
মারামারির ঘটনায় আহত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল হক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, 'মাঠের উত্তর পাশের গোল বারের কাছে আমরা ছিলাম। খেলার এক পর্যায়ে আমাদের আইন বিভাগের আমিনুল ইসলাম (খেলোয়াড়) স্লিপ করে। এসময় বিএমবি ডিপার্টমেন্টের একজন তাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে আসে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীকে প্রশ্নের জের ধরে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। ঘটনাচক্রে আমি নিজেও আহত হয়ে যাই। পরবর্তীতে প্রায় ২ ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। পরে রেফারিসহ সংশ্লিষ্টরা আইন বিভাগের সাথে কথা না বলে শুধু বিএমবি বিভাগের সাথে কথা বলে খেলা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু আইন বিভাগ অবশিষ্ট ৪ মিনিট পেনাল্টি কিকে খেলার কথা জানায়।’
সার্বিক ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য জানান, 'আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীকে কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না। কোন শিক্ষার্থী করলো সেটি দেখা হবে না। মাঠের মধ্যে যা হয়েছে সেজন্য রেফারির ছিল, তবে মাঠের বাইরে যা ঘটেছে তার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী কখনো কারো আত্মীয় হতে পারে না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, 'পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসন খেলা স্থগিত করেছে। আগামীকাল মিটিংয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা সবার আগে।এই পরিস্থিতিতে খেলা চালানো কঠিন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, 'আজকের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঝে খেলোয়াড়দের উপর হামলার বিচার হবে। আমরা আগামীকাল এই বিষয় নিয়ে বসবো। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং চিকিৎসা নিয়েছে সবার সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব খরচ বহন করবে।'
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available