নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি বেচা-কেনার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর বেচা-কেনার এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু ডাকাহার আশ্রয়ণ প্রকল্পেই নয় উপজেলার অন্যান্য প্রকল্পেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি এমন বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে। উপজেলার কালিগ্রাম মুনসিপুর গ্রামের মৃত-তহির উদ্দীন মোল্লার ছেলে রফিকুল ইসলামের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এমন বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ধাপের আওতায় উপজেলার একডালা, কালীগ্রাম, বড়গাছা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ৯০টি, ২য় পর্যায়ে ৩৩টি ও ৩য় পর্যায়ে ৫৩টিসহ মোট ১৭৬টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে দুটি কক্ষ, সংযুক্ত রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দাও রয়েছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ, বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবয়েল স্থাপন, চলাচলের জন্য রাস্তা ও নামাযের জন্য মসজিদসহ প্রধান প্রধান প্রয়োজনগুলো নিশ্চিত করা হয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থ বছরে উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার চৌধুরীপুকুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে কয়েক দফায় ৫৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার এসব ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মুজিব শতবর্ষের উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হলেও প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরই অনৈতিক ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যাদের জমি ও বাড়ি উভয়ই আছে এমন সব ব্যক্তিদের।
আরো জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১নং ঘর বিক্রয় করেন মো. বেনো হোসেন আর ক্রয় করেন আজিজার। ৩৫নং ঘর মো. ফেকরুল বিক্রয় করেন আর ডাকাহার গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে ইউনুছ আলী সেটি কিনে নেন। একই ঘর আবার ইউনুছ আলী বিক্রয় করেন দুলালের নিকট। ৩৭নং ঘর আলম বিক্রয় করেন শরিফুলের কাছে। ডাকাহার গ্রামের ছলিম উদ্দীনের নিজস্ব জমি থাকার পরও বাপ-ছেলে ২টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। এছাড়াও তারা আরো ২টি ঘর বিক্রয়ের জন্য ক্রয় করে রেখেছেন। রহমান কবিরাজ ওই গ্রামের মধ্যে তার ছাঁদ দেওয়া পাঁকা বাড়ি থাকা সত্বেও আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২টি ঘর কিনে রেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি হাছিন আলীর গ্রামে জমি ও বাড়ি থাকার পরও তার মা হাসিনা বেগমের নামে ১টি ঘর, নিজের নামে ১টি ঘর ও স্ত্রীর নামে ১টি ঘরসহ মোট ৩টি ঘর বরাদ্দ নিয়ে নিজেদের দখলে রেখেছেন। মায়ের ঘর বিক্রির জন্য আগ্রহী ক্রেতাদের নিকট দরদামও চলমান রেখেছেন। এই আশ্রয়ণের সকল ঘর বিক্রয়ের মূল হোতা হাছিন আলী বলে জানান স্থানীয়রা।
এই প্রকল্পের ৫৯টি ঘরের মধ্যে ২০টি ঘর ছাড়া সবই ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের অন্যান্য বাসিন্দারা। ঘর পাওয়ার যোগ্য এমন অসহায় মানুষরা সংশ্লিষ্ট অফিসের দালালদের চাহিদা মাফিক মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারার কারণে তারা ঘর পায় না। অথচ যারা ঘর নিয়ে জমজমাট ব্যবসা করছেন বিষয়টি জানার পরও কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দিন যতই যাচ্ছে ততই তাদের অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তারা আরও জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্প সমবায় সমিতির বিভিন্ন পদে থাকা ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় দুর্বল আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের অহেতুক ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেন। যারা প্রতিবাদ করেন তাদের ঘর থেকে বের করে দেয়ার হুঁমকি-ধমকি প্রদান করা হয়। যদি প্রথম থেকে সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত গৃহহীনদের প্রদান করা হতো তাহলে এমন জঘন্য ঘটনাগুলো ঘটতো না।
অভিযোগকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি ঘর প্রকৃত গৃহহীন পায়নি। যাদের ঘর আছে তারা পেয়েছে। যারা শুরু থেকেই অফিসের দালালদের সঙ্গে আতাত করে আর্থিক লেনদেন বজায় রেখেছিলেন তারাই আজ অন্যায়ভাবে সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকল্পে অবৈধভাবে রাজত্ব করছেন। তাই প্রশাসনের কাছে আমার দাবি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের মাঝে ঘরগুলো বরাদ্দ প্রদান হোক।
একডালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান আলী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘরগুলো হাত বদল হচ্ছে। আমি উপজেলা আইনশৃংখলা মাসিক সভায় এই বিষয়ে একাধিকবার বলার পরও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন সব অন্যায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আশ্রয়ণ প্রকল্প সমিতির পদে থাকা প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিরা পুরোদমে জড়িত। আমি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পরবর্তী ব্যবস্থা তিনিই গ্রহণ করবেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে তাবাসসুম জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কারণে তদন্ত কমিটি নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত থাকায় এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই পরবর্তি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available