গাজীপুর প্রতিনিধি: বিশ্ব ইজতেমায় সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ৫৪টিরও বেশি দেশের হাজার হাজার মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছেন। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল পর্যন্ত জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন।
ফজর নামাজের পর থেকে মঞ্চ থেকে চলছে আম বয়ান, খিত্তায় খিত্তায় বসে মনোযোগ দিয়ে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা। ইজতেমা থেকে শেখা সকল আলম বাড়িতে গিয়ে পরিবার পরিজনকে সাথে নিয়ে সেই আলম সারা বছর চালু রাখবেন এমনটি প্রত্যাশা করেন মুসল্লীরা। ভাষাভাষি ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে ৪ তাবুতে রয়েছেন মেহমানরা। এর মধ্যে রয়েছে ইংরেজি খিমা, উর্দু খিমা, আরবি খিমা ও বাংলা খিমা।
ভারদের দিল্লি থেকে আসা মোহাম্মদ আবুল রায়হান জানান, বিশ্ব ইজতেমাকে পবিত্র হজ্বের পরেই এবাদতের জায়গা হিসেবে ধরা হয়। প্রতি বছর বড় একটি জামাত নিয়ে আসেন। জামাতে প্রায় শতাধিক সাথী ভাই থাকেন। ইজতেমা পরিবেশ অনেক সুন্দর বলে জানান তিনি।
বগুড়া ধেকে আসা আরেক মুসল্লি মো. মিয়া হোসেন শেখ জানান, এবার শীতের প্রকোপ কম থাকায় খিত্তায় কোন অসুবিধা ছাড়াই তাঁরা এবাদত করতে পারছেন। বয়ান শুনা শেষ হলে তাদের মুতাকাল্লিমের কাছ থেকে আল কোরআন শেখেন ও বিভিন্ন হাদিস শিক্ষা নেন।
কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ইকবাল আহমেদ জানান, ইজমেতা বা তাবলীগে আসার আগে তিনি নামাজটাও ঠিক মত পড়ার নিয়ম জানতেন না। এখন সাথী ভাইদের কাছ থেকে সব শিখে নামাজ পড়তে পারেন এবং বিভিন্ন আলমও শিখেছেন তিনি।
ফজরের পর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সাদ, বাংলা তরজমা করেন মুফতি ওসামা ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টায় তালিমে হালকা মোয়াল্লেমদের সঙ্গে কথা বলবেন ভারতের মাওলানা আব্দুল আজিম। জোহরের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা শরিফ। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা মাহমুদুল্লাহ।
আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আজিম উদ্দিন। বয়ানের পর যৌতুকবিহীন বিবাহ পড়ানো হবে।
এছাড়া রোববার ফজরের পর বয়ান করবেন ভারতের মুফতি মাকসুদ। বাংলা তরজমা করবেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। বয়ানের পরই হেদায়েতের কথা ও দোয়া পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম।
বিশেষ ট্রেন:
টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রেলওয়ে বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইজতেমা ময়দানে ফ্রি চিকিৎসা সেবা:
বিশ্ব ইজতেমায় আগত দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে বিভিন্ন প্রতষ্ঠান প্রথম পর্বের ন্যায় দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে অর্ধশতাধিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লিকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে ইজতেমা আয়োজন করা হয়। ১৯৬৬ সালে গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমান ময়দানে স্থানান্তর করা হয় বিশ্ব ইজতেমা।
২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সাদপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিচ্ছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available