পাবনা প্রতিনিধি: সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়েছিলেন ২০ বছরের তরুণ সাগর হোসেন। পরিবারের জন্য টাকাও পাঠাতেন। কিন্তু এই যাত্রা আর দীর্ঘায়িত হলো না তার। পরিবার-পরিজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সাগর।
২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে লাগা আগুনের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে তাঁর নামটিও।
নিহত সাগর পাবনার জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাগর ছিলেন সবার বড়। তাঁর বাবা দিনমজুর ও মা গৃহিণী।
একই গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত মনিরুল ইসলাম মনির জানান, গারদা শিলড সিকিউরিটি কোম্পানির মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ক্লথিং ব্যান্ড ইপিলিয়ন শো রুমে জয়েন করেছিলেন ওই ভবনে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুনে আটকা পড়ে মারা যান সাগর।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সাগরের বাড়িতে স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা-মা। মাঝে মাঝে ছেলের জন্য আর্তনাদ করছেন তাঁরা। প্রতিবেশীরা তাঁদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন। শোকে ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির চারপাশ।
সাগরের বাবা হাসান আলী বলেন, ‘দিনমজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালাই। ছেলেকে লেখাপড়া করানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাবা-ছেলে আলোচনা করে কর্মের সন্ধানে তাঁকে ঢাকায় যেতে বলি। চার মাস আগে সে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। টাকা পাঠাত। তা দিয়ে বেশ সংসার চলছিল। গত রাতে ১টার দিকে জালসা শুনে বাড়ি ফিরি। পরে শুনতে পাই ছেলে আর নাই।
সাগরের মা সাবিনা খাতুন বলেন, দুদিন আগে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে ১০ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল সাগর। আমি বলেছিলাম, টাকার দরকার নাই, তুমি বাড়ি চলে আস। কিন্তু তার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেল।’ বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাগরের মা।
এ বিষয়ে হাদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন, ‘সাগর আমাকে দাদা বলে ডাকত। ঢাকা থেকে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ঢাকা যাওয়ার আগেও আমার সঙ্গে কথা বলেছে। শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় সাগর মারা গেছে। এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তাঁর পরিবারটি খুবই অসহায়। আমি এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে দাবি জানাই, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যেন পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পায়।’
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available