রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি: রামু উপজেলার রাজারকুল রেঞ্জের বিট অফিসার পল্লব সাহার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাহাড় খেকোদের যোগসাজশে বিট কর্মকর্তা পল্লব মৌখিক ট্রানজিট পাসের মাধ্যমে বনাঞ্চলের কাঠ, পাহাড় টিলাকাটা মাটি বালি পাচারের সুযোগ দিয়ে প্রতিদিন ঘুষ আদায় করেন হাজার হাজার টাকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পল্লবের অনিয়ম-দুর্নীতি আর ঘুষবাণিজ্যের কারণে গত কয়েক মাসে বনবিট এলাকা থেকে লক্ষ্য টাকা মূল্যের কাঠ পাচার হয়ে গেছে। ন্যাড়া হয়েছে সরকারি বনভূমি, শ্রেণি পরিবর্তন হয়েছে অসংখ্য পাহাড়/টিলা। এছাড়া বন বিভাগের জমি দখল, বিক্রি, বালি মাটি পাচারের সুযোগ দিয়ে বন খেকোদের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা পল্লব। তার এসব অপকর্মে সহযোগিতা করছেন একই বিটে কর্মরত ফরেস্ট গার্ড জয়সেনসহ আরও কয়েক জন।
সূত্রে জানা যায়, রাজারকুল রেঞ্জের আওতায় বিট অফিস রয়েছে ৪টি। তন্মধ্যে রাজারকুল সদর বিট কর্মকর্তা পল্লবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তার কর্মরত এলাকায় বসবাসকারী মানুষকে মামলার ভয় দেখিয়ে ব্যাপকভাবে ঘুষ গ্রহণ করছেন। তার দায়িত্বরত বিট এলাকার বনসম্পদ বড় বড় গর্জন (মাদার ট্রি) গাছ, পাহাড় কেটে মাটি বালি বিক্রি, বনভূমির জমি জবরদখল, বিক্রি, পাকা আধাপাকা ঘর নির্মাণ, বনভূমির জমিকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে এক শ্রেণির মানুষকে অবৈধভাবে সুযোগ করে দেন তিনি।
অপরদিকে বনের জমি সংলগ্ন খতিয়ান ভুক্ত রেজিস্টার জমির উপর বহু বছর ধরে বসবাস করে আসা নিরীহ মানুষের ঘর-বাড়ি মেরামত করতে গেলেই ওই জায়গা বনের জমি দাবি করেন পল্লব। এরপর সেলামি হিসেবে দিতে হয় তাকে মোটা অঙ্কের টাকা। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলেই বন মামলা ঠুকে দেওয়ার হুমকি দেন।
রাজারকুল সদর বিটের অধীন ছাগলিয়াকাটা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারটি স্থানের পাহাড় থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় সিন্ডিকেটটির প্রধান জহির উদ্দীন (পুতু)।
তার নেতৃত্বে এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে। এ এলাকায় পাঁচটি স্থান (দানু মিয়া,আব্দুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, নাছির উদ্দীন ও নবি হোসেনের বসতবাড়ি পাহাড়) থেকে দৈনিক ৫০/৬০ ডাম্পার গাড়ি মাটি-বালি বের করা হয়। সদর বিট অফিস থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে নির্বিচারে পাহাড় কেটে মাটি-বালি পাচার করা হলেও বিট কর্মকর্তা পল্লবের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতোমধ্যে কর্তন করা পাহাড়গুলো ৫০ শতাংশ মাটি-বালি পাচার হয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে রাজারকুল সদর বিটে পল্লব সাহা যোগদানের পর থেকে সবচেয়ে বেশি পাহাড় কাটা হচ্ছে ছাগলিয়াকাটায়।
স্থানীয় রাশেদ বলেন, রাজারকুল বিট কর্মকর্তা হিসেবে পল্লব যোগদানের এক মাস পর থেকেই শুরু হয় বেপরোয়া গতিতে পাহাড় কাটা। একই সাথে বন উজাড়, বনভূমি বিক্রি, দখল, বনয়ায়নের চারা কেটে কৃষি জমি তৈরিসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যোগদানের এক মাসের মধ্যেই তাঁর সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠে শীর্ষ পাহাড়খেকো বন মামলার আসামি জহির উদ্দীন পুতুর। নতুন করে আর কোন মামলা না হওয়ার বিশেষ গোপন চুক্তিতে পাহাড় কাটার লাইন দেন পুতু সিন্ডিকেটকে।
এরপর থেকে প্রায় এক মাসে রাজারকুল বন বিটের ছাগলিয়া কাটার এক এলাকাতেই কেটে শেষ করা হয়েছে আনুমানিক একরের ৫/৬ টি পাহাড়। যার পরিমাণ আনুমানিক ২০ হাজার ঘনফুট।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান সোহেল বলেন, বন বিভাগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে বনজ সম্পদ রক্ষার চেয়ে বনজ সম্পদ লুটপাটকারীদের রক্ষায় তারা বেশি ব্যস্ত। বন বিভাগের স্বার্থ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান। অভিযোগের বিষয়ে জানতে রাজারকুল বিট কর্মকর্তা পল্লব সাহার মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available