বিশেষ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বাজার! জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পরেই জায়গা হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এই কথাটি বলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কিসের জোরে? ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ কোন ম্যাজিকে রাতারাতি বিশ্বের নজর কাড়বে? উত্তর রয়েছে শেখ হাসিনার কথায়। নদী ঘেরা আজকের বাংলাদেশ সাজছে উন্নত স্মার্ট রূপে। তাই আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে নিয়ে একটু বেশি হৈচৈ হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ছোট্ট দেশ হলেও, প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা বাংলাদেশ। তাই তো এখানে বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্র নেতাদের আনাগোনা একটু বেশি। তার উপর বঙ্গোপসাগরের গা ঘেঁষে থাকা ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অংশ হওয়ায় বিশ্ব ভূ রাজনীতিতে বাংলাদেশে কদর খানিকটা বেশি। এবার সেই দেশ হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম বাজার, কিন্তু কীভাবে?
বাংলাদেশের বাজারটা অনেকটা বড়। আর সেই বাজারকে গোটা বিশ্বের কাছে আকৃষ্ট করতে চাইছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তাই তো কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী কমনওয়েলথ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই এমন কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থলে। এছাড়া, আমাদের রয়েছে ১৭ কোটি মানুষ। যার বৃহৎ অংশ যুবসমাজ। বাংলাদেশের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পুনঃবিনিয়োগ থেকে। এ থেকে প্রমাণ হয় বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিদ্যমান।’
ভৌগোলিক ভাবে বাংলাদেশ রয়েছে ৩০০ কোটি মানুষের বাজারের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশেও প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বসবাস। স্বাভাবিকভাবেই গোটা বিশ্বর কাছে বাংলাদেশ একটা আকর্ষণীয় বাজার। এই ব্যাপারটাকেই টার্গেট করতে চাইছেন শেখ হাসিনা। তাঁর কথায়, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিত্তশালী ব্যক্তির জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে তিন কোটিতে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ টক্কর দেবে জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যকে। হয়ে উঠবে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাজার। তাই উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী, এমন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তোলার অপেক্ষা করছেন তিনি।
এব্যাপারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় এ দেশের অর্থনীতিকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। আমার বিশ্বাস, সেই কিসিঞ্জার যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিই এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে বিস্মিত হতেন। এখন আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারি সেই তলাবিহীন ঝুড়ি আজ বিশ্বের বিস্ময়, উন্নয়নের এক রোল মডেল।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়েছে। স্বাধীনতার সময়ে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে পাকিস্তান এগিয়েছিল। প্রতিটি সূচকেই তারা বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে। এটিই আমাদের স্বাধীনতার বড় অর্জন।’
বাংলাদেশে এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটা উচ্চমানের বিনিয়োগ প্রয়োজন। তাঁর কথায়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য এখন সব রকম খাতই খোলা। কৃষিপণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম,অটোমোবাইল থেকে শুরু করে জাহাজ নির্মাণ ও আইসিটি খাতে দুর্দান্ত বিনিয়োগ করা যাবে। বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ সহজ পদ্ধতিতে ফিরিয়ে নিতে পারবেন আপন দেশে।
আগ্রহ বাড়াতে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে তৈরি হয়েছে প্রায় ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, ১০৯ টি হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক সহ আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। পাশাপাশি আধুনিক পরিকাঠামোতে সাজছে স্থল, রেল এবং বিমান যোগাযোগ। বাংলাদেশের অধিকাংশ মহাসড়কই চার কিংবা তার থেকেও বেশি লেনে উন্নীত করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলাকে ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু। খুব শিগগিরই সেতুর মাধ্যমে সূচনা হবে ঢাকা এবং খুলনার রেল যোগাযোগ। অপরদিকে প্রস্তুত কর্ণফুলী আন্ডারওয়াটার টানেল, এই ধরনের অবকাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম। স্বপ্নের পর্যটন নাগরিক কক্সবাজারের সঙ্গে দ্রুত সংযুক্ত হবে চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ। আপাতত লক্ষ্য, ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান ভিত্তিক এবং উন্নত স্মার্ট দেশে পরিণত করা। ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। হাঁ হয়ে দেখবে পুরো বিশ্ব।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available