• ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৫:৫৫:৫৮ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • শুক্রবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ভোর ০৫:৫৫:৫৮ (22-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

কাউনিয়ায় ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

৯ জুন ২০২৪ সকাল ০৯:৩৪:২২

কাউনিয়ায় ভুয়া এতিম দেখিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রংপুর ব্যুারো ও কাউনিয়া প্রতিনিধি: রংপুরের কাউনিয়ায় বেসরকারি এতিমখানায় ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। উপজেলার আল আমিন শিশু সদন এতিমখানার তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আব্দুস গফুর নামের এক ব্যক্তি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ভায়ারহাট সদরাতালুক গ্রামে আল আমিন শিশু সনদ নামের এতিমখানাটি ২০০১ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায় (যার নিবন্ধন নং রং/কাউ/৭৩৯/২০০১ইং)।

স্থানীয়রা জানান, এতিমখানাটি প্রথমদিকে কয়েক বছর সরকারি বরাদ্দ এবং স্থানীয়দের আর্থিক অনুদানে বেশ কয়েকজন এতিম শিশুদের খাওয়া ও দাওয়াসহ সবকিছু ব্যয় করতো কর্তৃপক্ষ। এরপর এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়া দিতে না পারায় আবাসিক এতিম শিশুদের বাড়িতে নিয়ে যায় অভিভাবকরা। এছাড়া করোনাকালীন সময় এতিমখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও এতিম শিশুর জন্য সরকারি বরাদ্দের টাকা উঠানো হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৬ সাল থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তার তদারকি ও নজরদারী না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে ভুয়া এতিম দেখিয়ে এতিমের টাকা লুট হলেও দেখার কেউ নেই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এতিমখানাটিতে কাগজে-কলমে ৫৮ জন এতিম শিশু দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দের (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। অথচ, এতিমখানাটিতে ৮ থেকে ১০ জন এতিম ও দুস্থ শিশু রয়েছে। তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি সংলগ্ন গ্রামের একজনকে সভাপতি বানিয়ে এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভুয়া এতিম সাজিয়ে এতিমের নামে সরকারি অর্থ লোপাট করছে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা ছমির উদ্দিন।

সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতল ভবনের নিচতলায় মসজিদ। আর দ্বিতীয় তলায় তিনটি রুমে এতিম শিশুদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ছয় থেকে ১৫ বছর বয়সী ৮ থেকে ১০টি শিশুর দেখা মেলে সেখানে। তাদের মধ্যে ভায়ারহাট গ্রামের দেলওয়ার, হোসেন মিয়া, সদরা তালুক গ্রামের সিয়াম মিয়া, লালমসজিদ এলাকার রিফাত ও গাইবান্ধার আহসান হাবিব জানায়, তারা বেশ কিছুদিন ধরে এখানে আছেন। তাদের সবার বাবা ও মা আছেন। রাতে অনেকে বাড়িতে থাকেন। তাদেরকে হিফজখানায় শুধু কোনআন শিক্ষা দেওয়া হয়।

এতিমখানার হিফজখানার শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন জানান, এখানে হিফজখানায় পড়ে প্রায় ৩০ জনের মতো শিশু। এরমধ্যে ৩ থেকে ৪ জন এতিম শিশু রয়েছে। তাঁর কাছে হাজিরার খাতা দেখতে চাইলে বলেন, এটা রয়েছে তত্ত্বাবধায়কের কাছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আল আমিন  শিশু সদনে ২০১৯-২০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫৫ জন এতিম শিশুর জন্য সরকারি বরাদ্দ বাবদ ৫২ লাখ ৮০ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪৩ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৮ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫২ জনের জন্য বরাদ্দ বাবদ ৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা।  

তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সামিউল ইসলামের প্রত্যয়নে এতিম শিশুদের খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ বাবদ ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা সরকারি কোষাগাড় থেকে তুলছে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি। আর এতিমের টাকার বেশিরভাগ চলে গেছে এতিমখানার তত্তআবধায়ক ও অন্যদের পকেটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আল আমিন শিশু সদনে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট পেতে এতিম ছাত্রদের ভর্তি, তালিকা তৈরি, অর্থ গ্রহণ ও বণ্টনে মানা হয় না সরকারি নীতিমালা। নেই সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা। এতিম তালিকায় থাকা ওই প্রতিষ্ঠানের অনেক শিশুর বাবা-মা আছেন। তাদেরও গ্র্যান্ট ক্যাপিটেশন পাওয়ার জন্য এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে। কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক ও পরিচালনা কমিটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে ।

এতিমখানাটির সাবেক সভাপতি শাহেনুর আলম জানান, ‘২০২২ সালে দুই বছর মেয়াদী কার্যকর কমিটিতে তাকে সভাপতি করা হয়। মার্চে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এতিমখানাটিতে আবাসিক-অনাবাসিকে ১৫ থেকে ১৮ জন এতিম ও দুস্থ শিশু ছিল। অথচ তত্ত্বাধায়ক ছমির উদ্দিন বিভিন্ন কৌশলে অতিরিক্ত এতিম শিশু দেখিয়ে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলেছেন। তিনি ভুয়া এতিম শিশু না দেখানো জন্য বলেছিলেন। তাঁর সময়ে গত অর্থবছরে দুই কিস্তিতে ৫৫ জনের বরাদ্দ বাবদ ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা তুলেছেন। ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে সাংবাদিকদের দেয়া হয়েছে ৪০ হাজার টাকা, সরকারি অফিস খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা, শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন বাবদ ৮০ হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ও পোশাকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অবশিষ্ঠ টাকা তত্ত্বাবধায়ক নিয়েছেন। ২য় কিস্তির ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক কৌশলে ব্যাংকের চেকে প্রতারণা করে ৫ লাখ ১০ হাজার এবং বিগত সময়ের কমিটির স্বাক্ষরে অবশিষ্ট টাকা তুলেছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। অর্থাভাবে গতবছরের সেপ্টম্বর মাস থেকে এতিমখানাটি বন্ধ রয়েছে। চলতি অর্থবছর (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) পর্যন্ত ৫৮ জন এতিমের  বরাদ্দ বাবদ ১ম কিস্তির ৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য এতিম শিশুদের তালিকা ও খচরের ব্যয় ভাউচার সমাজসেবা অফিসে জমা দেন তত্ত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি, জেলা সমাজসেবা উপপরিচালকের বরাবরে এতিমখানার তত্ত্বাবধায়কের বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার লিখিত অভিযোগ করেছে স্থানীয় এক ব্যক্তি। এরপরও বিভিন্ন তদবির ও কৌশলে এতিমের বরাদ্দের টাকা সমাজসেবা থেকে ছাড় করার পাঁয়তারা করছে তত্ত্বাধায়ক। এজন্য নতুন করে কমিটিও করা হয়েছে। কমিটিতে স্থানীয় এক সাংবাদিককে করা হয়েছে সভাপতি। আর তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানে থাকেন না। বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের সময় হলে তিনি প্রতিষ্ঠানে চলে আসেন।’

শাহেনুর আলম আর বলেন, ‘বিগত সময়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এতিমখানাটি পরিদর্শন করা হয়েছে কি-না তাঁর জানা নাই। তবে তার দুই বছর মেয়াদে কোনো কর্মকর্তা এতিমখানাটির খোঁজখবর নিতে আসে নাই। অথচ, ২০১৬ সাল থেকে সমাজসেবা কর্মকর্তার প্রত্যয়নে প্রতিবছর এতিমদের বরাদ্দের টাকা উঠনো হচ্ছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল আমিন শিশু সনদের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা ছমির উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া না পাওয়ায় অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সামিউল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়ম ও বিভিন্ন অসঙ্গিতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে ১ম কিস্তির বরাদ্দের টাকা ছাড় করা হয়নি। তিনি বলেন, বরাদ্দের টাকা ছাড় করা না হলে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ড বাতিল হয়ে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে চলতি অর্থবছর এতিমদের জন্য ১ম ও ২য় কিস্তির বরাদ্দের প্রায় ১৪ লাখ টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণ করাসহ এতিম শিশু ভর্তি করবে প্রতিষ্ঠানটি তত্ত্বাবধায়ক ও কমিটির সদস্যরা।’

তবে সমাজসেবা অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ‘এতিমদের জন্য বরাদ্দ অন্যখাতে ব্যয় করতে পারবে না। বরাদ্দের টাকা শুধুমাত্র এতিম শিশুদের খাওয়া, পোশাক ও চিকিৎসার জন্য ব্যয় করতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দের টাকা ব্যয় না হলে, তা সরকারি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগাড়ে জমা করতে হবে।’

উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন বলেন, ‘আল আমিন শিশু সদন এতিমখানার বিরুদ্ধে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ পেয়েছি। ১৭ মার্চ তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক ছমির উদ্দিন ৬১ জন এতিম শিশু হাজির দেখিয়েছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটিতে এতোগুলো এতিম শিশু লালন পালনে নেই আবাসন, নেই খাওয়ার জন্য ডাইনিং রুম। প্রতিষ্ঠানটির আবাসন অবকাঠামো অনুযায়ী ১২ থেকে ১৫ জন জন এতিম ও দুস্থ শিশু থাকতে পারে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে চলতি অর্থবছর এতিমদের জন্য বরাদ্দের টাকা ছাড় না করার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ







ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু
২১ নভেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:০৫:৩৩