এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ: মানুষের কষ্ট ও ক্ষতি দূর করা এবং জীবনযাপন সহজ করা ইসলামী শরিয়তের অন্যতম উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের প্রতি সহজতা চান (বাকারা : ১৮৫)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কষ্ট চাপিয়ে দেননি। ( সূরা-হজ্ব : ৭৮)
আর এমনিভাবে মানুষের কষ্টের বা অসুবিধার কথা চিন্তা করে রোযা ভাঙ্গার বিধান রাখা হয়েছে। যেসব কারণে রোযা ভাঙ্গা যায় ! সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো-
১. সফররত ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা না রাখার অবকাশ আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে। ” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪) শর্ত হলো, যত টুকু পরিমাণ সফর করলে নামাজ কসর করা বৈধ, ততটুকু সফর করা। তবে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে।
হাদীস শরীফে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি। ’ (বুখারি : ১৯৪৭)
২. রোযাদার ব্যক্তির অসুস্থতার দরুণ অধিক পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা হলে রোযা ভাঙ্গার বা না রাখার অনুমতি আছে। তবে পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হবে। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে। ” (বাকারা : ১৮৪)
৩. গর্ভধারিণী বা দুধপায়ী নিজের বা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে রোযা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরবর্তীতে কাযা আদায় করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন। (নাসায়ি : ২৩১৫)
৪. রোযাবস্থায় হায়েয বা নেফাস হলে রোযা ভেঙ্গে ফেলবে। পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে। রোযাবস্থায় অধিক ক্ষুধা বা পানির পিপাসা লেগে প্রবল ক্ষতির আশঙ্কা হলে রোযা ভাঙতে পারবে এবং কাযাও আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২০৭)
৫. বার্ধক্যজনিত কারণে অতিশয় বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের যদি রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য না থাকে তবে তাদের না রাখা অবকাশ রয়েছে। যদি তার রোযা থাকার শক্তি না থাকে, তবে সে প্রতিদিন মিসকিনকে খাওয়াবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার কারণে যাদের খুব বেশি কষ্ট হয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। (বাকারা : ১৮৪)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আয়াতটি এখনো রহিত হয়নি। এমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী যাদের রোজা রাখার সামর্থ্য নেই, তারা প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়াবে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/২০৭)
৬. অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে এবং বিশেষ প্রয়োজনে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। (মুসলিম : ১১২০) পরিশেষে মহিমের নিকট প্রার্থনা, যেন মহান আল্লাহ তায়ালা সকলকে সুস্থতার সহিত সবগুলো রোযা রাখার তাওফিক দান করেন।
{লেখক- এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ, মুহাদ্দিস-জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুদ দ্বীন, তিতাস, কুমিল্লা}
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available