তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি: পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করছেন আল ইমরান শাওন ও শারাবান তহুরা শান্তা দম্পতি। ‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শিখি’- এই স্লোগান নিয়ে হেঁটে ৯২৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেটে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় পৌছেছেন তারা। ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুরে বাংলাবান্ধার জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।
শাওন ও শান্তা বলেন, গত ২৭ জুন আমরা টেকনাফ থানায় চিঠি দিয়ে চলে যাই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে। পরদিন ২৮ জুন থেকে হেঁটে ভ্রমণ শুরু করি। প্রথম দিন শাহপরীর দ্বীপ থেকে বড় ডেইল পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার হাঁটি। সেখানে থাকার জায়গা না পাওয়ায় মরিসবুনিয়া নামে একটি স্কুলের নৈশ প্রহরীর বাড়িতে রাতযাপন করি। সে রাতে পাহাড়ি হাতি আমাদের আশ্রয়স্থল ও আশপাশের বাড়িতে আক্রমণ চালায়। আমরা গভীর রাতে সবাই দৌড়ে স্কুলের পাকা বিল্ডিংয়ে আশ্রয় নিই।
পরদিন ছিলো ঈদের দিন। আমরা ঈদের দিন ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে বড় ডেইল মরিশবুনিয়া স্কুল থেকে ইনানি বিচ পর্যন্ত আসি। এ সময় আমরা পুরোটা পথ মেরিন ড্রাইভের অস্বাভাবিক রোদ আর সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আসি। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার হেটে ফেলি একবারে। এরপর অফিসের ব্যস্ততা, মায়ের অসুস্থতা ও পারিবারিক কিছু কারণে কয়েক সপ্তাহ পর আবার সপ্তাহের ছুটির দিনে শুরু করি হাঁটা। এভাবে আমরা নীলফামারী রেলস্টেশন পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।
জানা যায়, শারাবান তহুরা শান্তা পেশায় একজন ব্যাংকার। ঢাকায় ট্রাস্ট ব্যাংকের খাজা গরিবে নেওয়াজ শাখায় জুনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। অপরদিকে তার স্বামী আল ইমরান শাওন একজন আর্কিটেক্ট। তিনি মন্ডল গ্রুপ অব কোম্পানিতে আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেন। চাকরির ফাঁকে ছুটির সময়গুলোতে ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। তারা ২ জন অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ১ম সর্বোচ্চ চূড়া সাকা হাফং, ২য় সর্বোচ্চ জোতলাং, ৪র্থ সর্বোচ্চ জোগী হাফং, তাজিংডন, কেওক্রাডং ও বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরেছেন।
হেঁটে ভ্রমণের বিষয়ে জানতে চাইলে শান্তা বলেন, কিশোর-কিশোরীদের অনাকাঙিক্ষত আত্মহত্যার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে আমাদের এই ইভেন্ট জার্নি । আমরা পথে পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এর মধ্য দিয়েই নিজের দেশকে খুব কাছ থেকে দেখতে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় এসেছি। এ জার্নিতে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো শারীরিক সুস্থতা। তবে মানসিক শক্তি দিয়ে সেটা অতিক্রম করেছি। আমার খুব কাছের কিছু বন্ধু ও ট্রাভেল গ্রুপ আউটডোর বিডির স্বত্বাধিকারী জুয়েল রানা ভাই খুব সহায়তা করেছেন। কিছু কিছু জায়গায় আমার স্বামী শাওন বেশি সামনে চলে গেলে আমি পেছনে একা হাঁটতে গিয়ে মেয়ে হিসেবে বুলিংয়ের স্বীকার হয়েছি। তবে অনেক উৎসাহও পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি ব্যাংকে চাকরির আগে বেসকারি কলেজের লেকচারার ছিলাম। তখন আমার এক ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম, যে নবম শ্রেণিতে পড়তো। মহামারি করোনার সময় লম্বা ছুটিতে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করে। এ আত্মহত্যার পর থেকেই সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে আমাদের মাথায় এই চিন্তা আসে। সে চিন্তা থেকেই আমরা ভ্রমণে বের হয়ে তা শেষ পারলাম। আমাদের এই ভ্রমণে কিশোর, আজিজ, এহসান, নাজমুল, টুসি, আরিফ, আজিজ ও আমার কলিগরা অনেক সহায়তা করেছেন। আমার মা ও শাশুড়ি এ বিষয়ে যথেষ্ট পজিটিভ ছিলেন। শুরুর দিকে প্রবাল দাদা আমাদের রুট প্ল্যানে হেল্প করেছেন। তিনি আগে টেকনাফ টু তেঁতুলিয়া কমপ্লিট করেছিলেন।
আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বলেন, আমি ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করি। আমরা তো অনেকভাবে ঘুরাঘুরি করতে পারি। গাড়ি, বিমানসহ নানাভাবে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি স্বনির্ভরভাবে ঘোরাঘুরি করতে। সে পরিকল্পনা করেই আমি আউটডোর বিডি নামে প্রতিষ্ঠানটি খুলি। ঘোরাঘুরির জন্য প্রয়োজনীয জিনিসপত্র আমরা সরবরাহ করি। যখন জানলাম শান্তা ও শাওন হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করবে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের এ ভ্রমণে সাপোর্ট দিতে। আমি হয়তো হেঁটে তেঁতুলিয়ায় আসিনি, তবে আমি তাদের পাশে সার্বক্ষণিক সাপোর্টে ছিলাম। যাদের এ রকম ঘুরাঘুরির স্বপ্ন রয়েছে, তারা জানাতে পারেন। আমরা আউটডোর বিডি থেকে এরকম ভ্রমনকে উৎসাহিত করি এবং ভ্রমণ সফল করার চেষ্টা করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available