• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ০৬:১৯:৩৬ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:
এশিয়ান রেডিও
  • ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ সকাল ০৬:১৯:৩৬ (24-Nov-2024)
  • - ৩৩° সে:

জেলার খবর

৫ আগস্ট কেড়ে নিয়েছে মেধাবী মেয়ে রিতার বাবা-মায়ের স্বপ্ন

২ অক্টোবর ২০২৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৬:০৬

৫ আগস্ট কেড়ে নিয়েছে মেধাবী মেয়ে রিতার বাবা-মায়ের স্বপ্ন

কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: গরিব বাবা-মায়ের মেধাবী মেয়ে রিতা আক্তার। বাবা-মায়ের আশা ছিল মেয়ে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে দরিদ্র মানুষের সেবা করবে। সেই স্বপ্নপূরণের জন্য জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তালখুর গ্রাম থেকে ঢাকায় গিয়ে বাবা চালাতো রিকশা এবং মা অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করতো। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না রিতার বাবা মায়ের। গত ৫ আগস্ট পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারায় রিতা।

ঢাকার মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন রিতা। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে তিনি জয়পুরহাটের কালাই থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছিলেন। মেধাবী মেয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য বাবা আশরাফ আলী গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে রিকশা চালাতেন। মা রেহানা বিবি বাসাবাড়িতে কাজ করতেন। এত পরিশ্রমের পরেও স্বপ্নের আলো দেখতে শুরু করেছিল রিতা ও তার পরিবার। কিন্তু সেই আলো নিভে গেল ৫ আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের দিনে। পুলিশের গুলিতে মাথায় আঘাত পেয়ে রিতার প্রাণ চলে গেল, সাথে চলে গেল তার বাবা-মায়ের সব স্বপ্ন।

সেই দিনটি ছিল স্বাভাবিক এক সকাল। রিতা তার বান্ধবীর ফোন পেয়ে ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিতে বের হয়েছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার মিরপুর-২ এলাকায় ওভারব্রিজের নিচে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কলেজ ছাত্রী রিতা আক্তার। রিতা মারা গেলেও বাবা-মা তখনও তা জানতেন না। সারাদিন মেয়ের খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত খুঁজতে থাকেন তারা। অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের নিথর দেহ দেখতে পান। মেয়ের এই মরদেহ দেখে স্তব্ধ হয়ে যান বাবা আশরাফ আলী এবং মা রেহানা বিবি। তাদের পরিশ্রম, তাদের স্বপ্ন সবকিছু এক মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

আজ দু’মাস পেরিয়ে গেলেও বাবা-মায়ের কান্না থামেনি। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তালখুর গ্রামে রিতার ছোট্ট বাড়ির এক কোণে সাজানো রয়েছে তার বইগুলো। পুরস্কারের সারিতে রিতার অর্জনগুলো এখনো গর্বের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সে আর কখনোই হাত বাড়িয়ে সেগুলো ছুঁয়ে দেখতে পারবে না।

মা রেহানা বিবি নিরন্তর কান্না আর যন্ত্রণায় বলেন, ‘মেয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য আমি ঢাকায় গিয়ে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। তাতে আমার কোনো কষ্ট ছিল না। কিন্তু আমার মেয়েকে কেনো গুলি করে মেরে ফেলা হলো, সেটা আজও আমি বুঝতে পারছি না। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কী অপরাধ ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর তারা আজও খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

রিতার বাবা আশরাফ আলী বলেন, ‘যার জন্য গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় গিয়েছিলাম, সেই মেয়ে যখন নেই, তখন ঢাকায় থাকার কী দরকার? আমি এখন ঢাকা শহরকে ঘৃণা করি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। তার কণ্ঠে ফুটে ওঠে বেদনার তীব্রতা, শোকের গভীরতা।

রিতা আক্তারের স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না। তার বাবা-মা আজ শূন্য হাতে ফিরে গেছেন গ্রামে, তাদের সব আশা, সব স্বপ্ন রিতার সাথে মিশে গেছে ধূলায়।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ