নিয়ন দুলাল, লালমনিরহাট: প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলসহ শহুরে মানুষের বাড়িতে নিত্য দিনের সাংসারিক কাজে ব্যবহার হয়ে আসছিল কুমারদের মাটির তৈরির পণ্য। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধীরে ধীরে বিলীন হতে বসেছে মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের বিকল্প হিসেবে বর্তমান যুগের মানুষ ব্যবহার করছে প্লাস্টিক, মেলামাইনসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র।
সহজলভ্য ও ভঙ্গুর না হওয়ায় মাটির তৈরি পণ্যের ব্যবহার ভুলে মানুষ প্লাস্টিক, মেলামাইনসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি করা পণ্য ব্যবহার করছেন। তবে আধুনিক যুগে বসবাস করেও কিছু সংখ্যক মানুষ এখনও মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর ও ব্যবহার ভুলে যাননি, এই গুটি কয়েক ক্রেতাদের জন্য এখনও টিকে রয়েছে এই শিল্প। মৃৎশিল্পীরা তাদের বংশানুক্রমে পাওয়া এ কাজটিকে সম্মান করে এখনও টিকেয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা অনেক কষ্টসাধ্য। লালমনিরহাটের কিছু জায়গায় মাটির জিনিসপত্র তৈরি করতে দেখা যায়।
এদিকে মাটির তৈরি পণ্যের ক্রেতা সংকট ও সঠিক মূল্যায়ন না থাকায় ধীরে ধীরে হারাতে বসেছে এ শিল্পটি। তাই মৃৎশিল্পীরাও বেছে নিচ্ছেন অন্যান্য পেশা।
আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কুমারটারি নামক একটি এলাকায় মৃৎশিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাটির তৈরি পণ্য বানাতে এঁটেল মাটির প্রয়োজন হয়। মাটি সংকট ও দাম বৃদ্ধিতে সমস্যায় পড়েছেন তারা। শুধু মাটির দাম বৃদ্ধি নয়, মাটির তৈরি পণ্যগুলো শক্তপুক্ত করতে আগুনে পোড়ানোর জন্য প্রয়োজন হয় খরকুটো (খড়ি), সেগুলোরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সমাজসেবা অফিসের পক্ষ থেকে ট্রেনিং ও অর্থ দিয়ে থাকলেও এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর আধুনিকায়ন ও সরকারিভাবে জোরালো পৃষ্ঠপোষকতা এবং বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলেই কেবল মৃৎশিল্পটি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভব হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক বা মেলামাইনের পাত্রে গরম খাদ্য রাখলে সেখানে এক ধরনের ক্যান্সারের উপাদান বের হয়। আর সেটার কারণে ক্যান্সার হতে পারে। প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। সেক্ষেত্রে আমরা যদি মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার করি, সেটার মধ্যে কোন ভয় নাই। মাটির জিনিস যদি ভালোভাবে তৈরি করে ব্যবহার করা হয়, তবে সেটা সবসময় নিরাপদ। তবে বিভিন্ন কারণে ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার মানুষকে আকৃষ্ট করার ফলে মৃৎশিল্প হারাতে বসেছে।
তারা বলছেন, বর্তমানে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। তাই সময় উপযোগী মাটির পণ্য তৈরি করতে হবে। আর এজন্য মৃৎশিল্পীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণসুবিধাসহ বিশেষ ট্রেনিংয়ের আওতায় এনে স্মার্ট দক্ষ ও আধুনিক রুচিশীল কারিগর হিসেবে তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি তৈরি করা পণ্যের প্রচারণার উপর জোর দিতে হবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available