সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীতে নিত্যদিন অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। শহরে ট্রাফিক আইন মেনে না চলা এবং অদক্ষ বিভিন্ন যানবাহন চালকের কারণে যানজট লেগে যায়। তাই এটির হাত থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতে সড়ক বিভাজক ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছে। যার ফলে শহরে অনেকটা কমেছে যানজট। এটি চালু করেছে নীলফামারী ট্রাফিক বিভাগ। ফলে এর সুফল পাচ্ছে পথচারিসহ সাধারণ মানুষ। সাথে প্রশংসা কুড়িয়েছে ট্রাফিক বিভাগ।
জেলার ছয় উপজেলার প্রায় বিশ লাখ মানুষের যাতায়াত নীলফামারী শহরে। প্রধান সড়কের দুই পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, মন্দির-মসজিদ, সুপার মার্কেট ও সরকারি-বেসরকারি নানান প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়াও সড়কের ফুটপাতজুড়ে রয়েছে ভাসমান দোকানের হিড়িক। এ কারণে হরহামেশা লেগেই থাকে যানজট, ঘটে থাকে দুর্ঘটনা, হয়ে থাকে প্রাণহানির।
বিশেষ করে শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গী মোড়, বাটার মোড়, বড় বাজার ট্রাফিক মোড়, মাধার মোড়, কালিবাড়ী মোড়, আনন্দবাবুর পুল ও গাছবাড়ীতে ছিল চোখে পড়ার মতো যানজট। এতে করে ভোগান্তিতে পড়তো নীলফামারীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালগামী সাধারণ রোগী, গর্ভবতী মা, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীরা।
সম্প্রতি যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে জেলা শহরের প্রধান প্রধান স্থানগুলোতে অস্থায়ীভাবে সড়ক বিভাজক বসিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ ও জেলা পুলিশ। এতে যানজট আগের তুলনায় অনেকটাই কমে এসেছে।
এদিকে একই অবস্থা বিরাজ করেছিল জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা শহর সৈয়দপুরে। এ শহরের পাঁচমাথা মোড়, টার্মিনাল, মদিনা মোড়, পোস্ট অফিস মোড় এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মোড়ে লেগে থাকতো যানজট। সৈয়দপুর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজার রহমান জানান, ছোট এ শহরের হাজার হাজার রিক্সা,ভ্যান,অটো এবং ইজিবাইক চলাচল করে। তাছাড়া সোজা শহরের মধ্যস্থান দিয়ে রেলপথ। বেশ কয়েকটি ঢাকা,খুলনা এবং রাজশাহীগামী ট্রেন দিনে রাতে চলাচল করে। ফলে এ শহরে যানজট ছিল অসহনীয়। আমরা ট্রাফিক বিভাগ সেটা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বল করে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে এর পিছনে সকলকে সচেতন হতে হবে।
এ ব্যাপারে সাংবাদিক রানা আহমেদ বলেন,চৌরঙ্গীর মোড় দিয়ে ডিসি অফিস, হাসপাতাল,স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, নার্সিং ইনস্টিটিউট, প্রধান ডাকঘর,সোনালী ব্যাংক, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, মহিলা কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোর্ট, সদর থানা ও পুলিশ সুপার অফিসে যাতায়াত করেন মানুষ। সড়কের ওপরে অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখার ফলে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে দেখছি বিভাজক বসানোর ফলে রাস্তায় যানজট অনেকটা কমেছে। এখন ডিভাইডারের দুই পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে চলাচল করছে যানবাহন।
নীলফামারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুর আনোয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমার কলেজের সামনের সড়কে অস্থায়ী বিভাজক স্থাপন করলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সুবিধা হতো।
সড়ক বিভাজক স্থাপন প্রসঙ্গে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ট্রাফিক বিভাগ) জ্যোর্তিময় রায় বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই জেলা শহরের যানজট, সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে কী করা যায় বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার এসপি স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে তার দেওয়া পরামর্শে অস্থায়ী সড়ক বিভাজক বসানো হয়। ফলে শহরে এখন যানজট অনেকাংশে কমে গেছে। তবে এ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তানভীরুল ইসলাম।
নীলফামারীতে প্রায় এক যুগ পর ট্রাফিক বিভাগের এই ভিন্নধর্মী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ পথচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ যানবাহন চালকরা। তাদের দাবি, সড়ক বিভাজক স্থাপনের ফলে কমেছে যানজট ও দুর্ঘটনা। এটি স্থায়ীকরণের দাবি জানান তারা।
পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর জানান, যানজট নিরসন ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বিভাজক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সড়ক বিভাজক স্থাপন করে পুরো শহর এখন যানজটমুক্ত হয়েছে। যানবাহনগুলো সারিবদ্ধভাবে চলাচল করছে। শহরটি যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক বিভাগ সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। আগামীতে এটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available