চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: ৮ বছর আগে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের জন্য প্রভাষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে চারটি পদের কথা উল্লেখ থাকলেও তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেওয়া হয় ছয়জনকে। তবে নেওয়া হয়নি লিখিত পরীক্ষা। ফল যাচাই-বাছাই শেষে মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই নিয়োগ পান প্রার্থীরা।
কিন্তু মেধাতালিকায় দ্বিতীয় হওয়া সত্ত্বেও বাদ পড়েন মাসুমা আফরিন এ্যানি নামে এক চাকরিপ্রার্থী। এ্যানির স্বামী সরদার আবদুর রহিম ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় যোগ্যতা থাকার পরও বাদ দেওয়া হয় তাকে। সম্প্রতি এ বিষয়ে সিভাসুর তৎকালীন উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এ দম্পতি। সরকার পতন এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অভিযোগটি প্রকাশ্যে আসে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাতালিকায় প্রথম স্থানে থাকা এক পরীক্ষার্থী, তৃতীয় স্থান থেকে দুজন, চতুর্থ স্থানে থাকা একজন এবং সপ্তম স্থানে থাকা একজনসহ মোট ৬ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিয়োগ বঞ্চিত হন দ্বিতীয় স্থানে থাকা এ্যানি। শুধু ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ভাইভা নিয়েই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। ভাইভার আগের সাবেক উপাচার্য গৌতম বুদ্ধ এ্যানিকে ডেকে বলেন, ‘তোমার স্বামী সরকারবিরোধী রাজনীতিতে জড়িত। তোমাকে নিয়োগ দেব না।’
এ্যানির স্বামী ডা. সরদার আব্দুর রহিম বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্বদ্যিালয়ের একটি হলের শিবিরের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। সে কারণে আমার স্ত্রীর যোগ্যতা থাকার পরও বাদ দেওয়া হয়। ওই সময় আমার ব্যাপারে খোঁজ নেয় সিভাসু কর্তৃপক্ষ। তাকে ডেকেও আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা জানানো হয়।
শুধু এ্যানির ঘটনাই নয়, কর্মচারীদের বাসা বরাদ্দ থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে গৌতম দাশের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের তালিকায় আছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীসহ অনেকেই। অভিযোগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও সরব কেউ কেউ।
আওয়ামী সরকারের আমলে সিভাসু কর্মচারীদের বাসা ভাড়া নিয়ে অনিয়মের তথ্য ফাঁস করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ২০২২ সালে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বেশ কয়েকজন কর্মচারীকে। তাদের একজন সিভাসুর কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জুয়েল বিল্লাল।
তিনি বলেন, কর্মচারীর নামে বরাদ্দ বাসা শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে। বাসা বরাদ্দে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হই। ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাসপেন্ড করে রাখা হয়।
সিভাসুর রেজিস্ট্রার মির্জা ফারুক বলেন, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে চাকরি না পাওয়ার একটি অভিযোগ এসেছে। নথিগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। আগের ভিসি পদত্যাগ করেছেন। নতুন ভিসি যোগদান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
অভিযোগের ব্যাপারে সাবেক উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ বলেন, নয় বছর আগের কথা পুরোপুরি মনে নেই। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুসারেই নিয়োগ হয়। ওই সময় যদি বোর্ডের একজন সদস্যও আপত্তি জানাতেন তাহলেও নিয়োগ হওয়ার কথা নয়। আর বাসা বরাদ্দের জন্যও আলাদা কমিটি রয়েছে। তারা যেভাবে সুপারিশ করে সেভাবেই কাজ হয়। কিছুদিন আগে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এটা নিয়েও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। দায়িত্ব থাকার সময় অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, তারাই এগুলো করছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available