হোসনেআরা নূরী নওরীন, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) মেম্বার অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান। পাশাপাশি তিনি ‘নওরীন’স মিরর’ ও ‘জামদানি এক্সপ্রেস’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর সফল হয়ে ওঠার নানা গল্প নিয়ে এশিয়ান টিভি অনলাইনের সাথে কথা হয় এই নারী উদ্যোক্তার। কথোপকথনে ছিলেন নুরুল ইসলাম।
প্রশ্ন: কখন ও কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ চলা শুরু?
হোসনেআরা নূরী নওরীন: ২০১৯ সালে অনলাইন বিজনেস ‘নওরীন’স মিরর’ দিয়ে আমার পথ চলা শুরু হয়। বাংলাদেশের নারী উন্নয়নে, সমাজে নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং ঘরে বসে একজন নারী যাতে কাজ করতে পারে, এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে আমি শুরু করি অনলাইন বিজনেস নওরীন’স মিরর। কিন্তু এর পর পরই দেখা দেয় বৈশ্বিক মহামারি করোনা। আমি তখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাথে কাজ করছিলাম। তাদের মানবসেবা নামে বিভিন্ন প্রকল্পের সাথে আমি কাজ করেছি। আমি মূলত কাজ করেছি দেশীয় পণ্য জামদানি নিয়ে। দেশীয় পণ্যকে গুণগত মানের দিক থেকে কীভাবে আরও ডেভেলপ করা যায় এবং মানুষের মাঝে সেটা পৌঁছে দেয়া যায়; সেটা নিয়ে কাজ করছি। বিশেষ করে, দেশীয় পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রশ্ন: অনুপ্রেরণা কোথায় কীভাবে পেয়েছিলেন?
হোসনেআরা নূরী নওরীন: আমি যখন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করেছি। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি। পাশাপাশি আমার পরিবারের পক্ষ থেকেও অনুপ্রেরণা ছিলো।
প্রশ্ন: এ পথ চলার গল্পটা বলুন।
হোসনেআরা নূরী নওরীন: পথ চলার গল্পটা খুব সহজ ছিলো না। একজন উদ্যোক্তা হওয়া কিন্তু খুব কঠিন একটা কাজ। আমরা শুধু চাইলেই একজন উদ্যোক্তা হতে পারি না। বিশেষ করে, নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও কঠিন। চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা এসেছে। সেগুলো মোকাবেলা করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি।
প্রশ্ন: কী কী প্রতিবন্ধকতা ছিলো সেখানে?
হোসনেআরা নূরী নওরীন: অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এসেছিলো। প্রথম দিকে আমি কীভাবে ব্যবসাটা শুরু করবো, কীভাবে মার্কেটটা ধরবো, কীভাবে কাস্টমারের কাছে যাবো, কোন কোন কাস্টমার আমাদের পণ্য নেবে এবং তাদের কার কি ডিমান্ড; এ ধরনের অনেক বিষয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিলো। যেহেতু আমি একদম অথেন্টিক ওয়েতে বিজনেস শুরু করেছিলাম, আমার ট্রেড লাইসেন্স থেকে শুরু করে, ফেইসবুক পেইজ, ওয়েবসাইটসহ ধারাবাহিকভাবে সব কিছু করেছি; ফলে ধীরে ধীরে সেই প্রতিবন্ধকতা ওভারকাম করতে পেরেছি। আর বিজনেস শুরু করার আগে, আমি আমার প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো ডেভেলপ করি এবং বিজনেসের সার্বিক বিষয়গুলো নিয়ে ভালোভাবে এনালাইসিস করেছিলাম। বিজনেসটা আমি কোন ওয়েতে শুরু করবো, কোথায় কোন গ্যাপ আছে, সেগুলো এনালাইসিস করে তারপর শুরু করেছিলাম। হুট করে সিন্ধান্ত নেইনি। এরপরও যখন যে প্রতিবন্ধকতা এসেছে, তখন সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি অন্য যারা বিজনেস করছে, তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি। বিভিন্ন ট্রেনিং নিয়েছি।
প্রশ্ন: স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।
হোসনেআরা নূরী নওরীন: আমরা কিছুদিন আগে দুবাইতে একটা রোড শো করে এসেছি। জিটেক্সের একটা প্রোগ্রামে আমরা অংশগ্রহণ করেছি। দুবাইতে রোড শো করার উদ্দেশ্যই ছিলো ক্রস বর্ডারের মাধ্যমে দেশের বাইরে কীভাবে আমরা দেশীয় পণ্যগুলোকে সহজে পৌঁছে দিতে পারি। সেই লক্ষ্যে আমরা দুবাই বিভিন্ন সেমিনার করেছি। ‘নওরীন’স মিরর’-কে একটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। ‘জামদানি এক্সপ্রেস’র মাধ্যমে জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করছি। আমার ইচ্ছে, দেশীয় এই পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি করতে চাই। ‘নওরীন’স মিরর’ ও ‘জামদানি এক্সপ্রেস’ দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরের মানুষও যাতে এক নামে চিনে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
প্রশ্ন: নতুনদের উঠে আসার ব্যাপারে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেয়ার আছে বলে মনে করেন?
হোসনেআরা নূরী নওরীন: সরকার আমাদের অনেকভাবে সহযোগিতা করছে। যেমন- ট্রেড লাইসেন্স, ডিজিটাল বিজনেস আইডেনটিটি (ডিবিআইডি) নিবন্ধন ইত্যাদি। নিবন্ধিত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে গ্রান্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সরকার চাচ্ছে, নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক। এতে বেকারত্ব কমবে। এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
প্রশ্ন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?
হোসনেআরা নূরী নওরীন: তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, আপনারা যে কাজটাই করবেন, একদম বুঝে শুনে দেখে তারপর শুরু করুন। হুট করে কাউকে দেখে কোনো কাজ শুরু করবেন না। একজনের পেইজ দেখে আপনি আপনার মতো করে পেইজ সাজাবেন না। যেহেতু আমাদের ৫ হাজারের উপর ফেইসবুক উদ্যোক্তা আছে এবং তারা ২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসা করছেন। তাই একজন আরেকজনেরটা দেখে কখনই এ ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন না। আপনি একদম নিজের মতো করে ক্রিয়েটিভ ও ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে যদি বিজনেসটা শুরু করতে পারেন, তাহলে আপনি সাসটেইন করতে পারবেন। এত ব্যবসায়ীর মধ্য কেন আপনার কাছ থেকে কাস্টমার পণ্য কিনবে, সেটা আপনাকে চিন্তা করতে হবে। গতানুগতিক গতিতে চললে আপনি কখনই বিজনেসটা রান করতে পারবেন না এবং ডেভেলপ করতে পারবেন না। এখন প্রতিটা ক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
আমরা ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। আপনারা এসব প্রশিক্ষণে যুক্ত হতে পারেন। প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার যে স্কিলগুলো কম আছে, সেগুলো ডেভেলপ করে আপনি এগিয়ে যেতে পারেন। আপনি যদি মার্কেটিং ভালো বোঝেন, কিন্তু ফাইনেন্সটা ভালো না বোঝেন, তাহলে আপনি বিজনেসটা ভালোভাবে করতে পারবেন না। সুতরাং মাকেটিংটা ভালোভাবে বুঝতে হবে, ফাইনেন্সটাও ভালোভাবে বুঝতে হবে। আমরা আপনাদের ভ্যাট, ট্যাক্স থেকে শুরু করে কীভাবে আপনার পণ্যের মার্কেটিং করবেন; এসব বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ই-ক্যাবের ২৩ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে। নতুনরাও এর সাথে যুক্ত হতে পারেন।
আরেকটা বিষয়, যেকোনো ব্যবসা শুরু করেই আপনি সাফল্য পাবেন, বিষয়টা সেরকম নয়। একটা কাজ শুরু করে আপনাকে অনেক সাধনা ও পরিশ্রম করতে হবে। সেই সাধনা ও পরিশ্রম যদি আপনি করতে পারেন, তাহলে সাফল্য পাবেন। পাশাপাশি সফলতা আসতে দেরি হলে নিজেকে ছোট বা ব্যর্থ মনে করা যাবে না, লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ফেইসবুক, ওয়েবসাইট, ট্রেড লাইসেন্সসহ লিগ্যাল ওয়েতে বিজনেস শুরু করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে সাধনা ও পরিশ্রম করলে সফলতা আসবে, ইনশা আল্লাহ।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available