বাগেরহাট প্রতিনিধি: দেশি-বিদেশি গবেষণার নেতিবাচক ফলাফল আর পরিবেশবাদীদের নানা প্রতিবাদ সত্ত্বেও নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন সুন্দরবনের জন্য বড় হুমকি।
নির্মাণের আগে এই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, বাস্তবে এখন ধারণার থেকেও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। সেন্টার ফর অ্যানভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস দ্বারা পরিচালিত মূল্যায়নে এ তথ্য উঠে এসেছে। নির্মাণের উদ্যোগকালীন সময় থেকেই রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল। পরিবেশবাদী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সুন্দরবনের কাছে ২০১৬ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হয় ২০২২ সালে। সম্প্রতি সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান সিইজিআইএসর গবেষণা রিপোর্টে উঠে এসেছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর পর থেকেই শর্ত ভঙ্গ করে উন্মুক্তভাবে কয়লা পরিবহনে দূষিত হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার নদী ও বন।
এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ছাই এবং কেন্দ্র থেকে নির্গত পানি শর্ত ভঙ্গ করে পরিশোধন ছাড়াই মিশছে প্রকৃতিতে। ফলে এই এলাকায় বাড়ছে নাইট্রেট, ফসফেট, পারদসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মাত্রা। যার বিরূপ প্রভাব দৃশ্যমান জলজ ও বনজ জীব বৈচিত্র্যের ওপর।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দরবন সংলগ্নসহ প্রকল্প এলাকায় (করমজল, হারবাড়িয়া, আকরাম পয়েন্ট, হিরণ পয়েন্ট) পাখির বাসা দেখা যায়নি, চারণভূমি বিলুপ্ত হয়েছে ও গৃহপালিত প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) খুলনার বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, সারা বিশ্বই যখন কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে সোচ্চার, তখন এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু সুন্দরবন, নদী বা প্রকৃতিরই ক্ষতি করছে না, বৈদেশিক ঋণ সহায়তার কারণে অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে। দীর্ঘমেয়াদি যেসব ক্ষতির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞরা করছেন তাতে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক সম্পদ আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. নাসিফ আহসান বলেন, ক্রমাগত এ দূষণ এখনই ঠেকানো না গেলে সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যে দেখা দেবে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। অন্যদিকে শুরু থেকেই যান্ত্রিক ত্রুটিতে কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বর্তমানে নানা সংকটে কেন্দ্রটি সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে, ফলে অর্থনৈতিক সুফলও মিলছে না এই কেন্দ্র থেকে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available