স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট: ভারত থেকে স্রোতস্বিনী বরাক নদী সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার আমলশীদ এসে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। এরপর সুরমা-কুশিয়ারা নামধারণ করে বয়ে চলেছে দুইদিকে। কখনো নদী দুটি সীমান্ত নদী হিসেবে, আবার কখনো বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদী দুটির পানি তলানিতে ঠেকে শীত মৌসুমে। আর এই সময় শুরু হয় ভাঙন।
এবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুরমা-কুশিয়ারার অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। নদীগর্ভে ভিটেমাটি, ফসলি জমি, হাট-বাজার, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ভাঙন ও বন্যা রোধে দুই নদীর সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নাব্যতা বৃদ্ধিতে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শিগগির এই প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এবার ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে জকিগঞ্জ উপজেলা ও পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে। এর মধ্যে জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরি, মাইজকান্দি, জকিগঞ্জ বাজার, ছয়লেন, নরসিংহপুর ও হাইদ্রাবন্দ গ্রাম রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে।
এছাড়া উপজেলার যেসব গ্রামের লোকজন ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সেসব এলাকার মধ্যে রয়েছে- খলাছড়া ইউনিয়নের ভুঁইয়ারমুড়া, পশ্চিম লোহারমহল, কাপনা, গাগলাজুর, সোনাপুর, বেউর, সদর ইউনিয়নের ছবড়িয়া, মানিকপুর, বাখরশাল, শষ্যকুঁড়ি, রারাই, সুলতানপুর ইউনিয়নের খাদিমান, অজরগ্রাম, সুলতানপুর, ইছাপুর, গঙ্গাজল, ভক্তিপুর, সহিদাবাদ, রহিমপুর, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিল্লাকান্দি, উত্তরকুল, লাড়িগ্রাম, আমলশীদ, বারঠাকুরী, বিন্নাপাড়া, ছালেহপুর, কসকনকপুর ইউনিয়নের বলরামেরচক, হাজীগঞ্জ, মুন্সিপাড়া, মিয়াগুল, চেকপোস্ট, মৌলভীরচক, বিয়াবাইল, ইনামতি, মানিকপুর ইউনিয়নের হরাইত্রিলোচন, আকাশমল্লিক, বাল্লা, রঘুরচক, কাজলসার ইউনিয়নের নালুহাটি, বড়বন্দ, আটগ্রাম, বারহাল ইউনিয়নের চক, নিজগ্রাম, পুটিজুরি, চককোনাগ্রাম, নোয়াগ্রাম, বিরশ্রী ইউনিয়নের সোনাপুর, পিয়াইপুর, পীরনগর, লক্ষ্মীবাজার, বড়চালিয়া, উজিরপুর, কোনাগ্রাম, মাজরগ্রাম, লাফাকোনা, বড়পাথর, জামডহর, ও সুপ্রাকান্দি।
সূত্র জানায়, কুশিয়ারার ৪১ কিলোমিটার সীমান্ত নদী। প্রতিবছর বাংলাদেশ প্রান্ত ভেঙে বড় বড় চর জাগছে ভারত অংশে। এতে ভিটেমাটিহারা হচ্ছে বাংলাদেশ অংশের মানুষ, অন্যদিকে চর এলাকা ভোগ করছে ভারত।
জকিগঞ্জ সদরের ছবড়িয়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আব্দুল মুকিত বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বহু পরিবার নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকছেন। ভাঙন এখনো থামেনি, গ্রামের মানুষ আতঙ্কে রয়েছে।’
জকিগঞ্জ পৌর এলাকার কেছরী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলায় কুশিয়ারা নদী জকিগঞ্জ বাজার থেকে অনেক দূরে দেখেছি। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে জকিগঞ্জ বাজারের অনেক জায়গা নদীগর্ভে চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় জকিগঞ্জ বাজার হারিয়ে যাবে।’
পাউবো সিলেট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সুরমা-কুশিয়ারার ভাঙন ও বন্যারোধে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুই নদীর ১০৫ কিলোমিটার ড্রেজিং ও ৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্পটি প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে, শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বাংলাদেশ প্রান্তে ভাঙন ও ভারত অংশে চর জেগে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অংশে নদীর পাড়েই জনবসতি। আর সকল বাড়িতেই পুকুর রয়েছে। পুকুরের সাথে নদীর সংযোগ থাকায় মাটি ও বালু নিচে নেমে যায়। এতে ভাঙন দেখা দেয়। অন্যদিকে, ভারত অংশে নদীরপাড় থেকে প্রায় ৫শ’ মিটার দূরে জনবসতি হওয়ায় ওই প্রান্ত না ভেঙে চর জাগছে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2024, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available